উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় জানুন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
সহজে ১০ হাজার টাকা লোন নেওয়া যায় যে কয়টি উৎস থেকেউদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়, উদ্যোক্তা লোন কাদের জন্য এছাড়াও উদ্যোক্তা লোন নেওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, এই লোন পাওয়ার যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া সহ উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল।
তাই আপনারা যারা উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চান তাদেরকে আর্টিকেলে স্বাগতম। কারণ এই সকল বিষয়গুলো এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র
ভূমিকা
উদ্যোক্তা লোন একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা। যা নতুন বা বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু বা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এটি ক্ষুদ্র, মাঝারি, এবং স্টার্টআপ ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে। লোন পাওয়ার জন্য উদ্যোক্তাকে প্রথমে একটি সুসংগঠিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হয়।
যা ব্যবসার লক্ষ্য, বাজারের বিশ্লেষণ, আয়-ব্যয়ের পূর্বাভাস এবং সম্ভাব্য লাভজনকতা তুলে ধরে। এরপর একটি উপযুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে নির্দিষ্ট আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। যেখানে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন পরিচয়পত্র, ব্যবসার নিবন্ধন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এবং কর বিবরণী জমা দিতে হয়।
আবেদনকারীর ক্রেডিট স্কোর, ব্যবসার স্থায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে ব্যাংক তার যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। সফলভাবে আবেদন গৃহীত হলে উদ্যোক্তাকে নির্দিষ্ট শর্তাবলী অনুযায়ী লোন প্রদান করা হয় যার মাধ্যমে তার ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়। নিচে উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার জন্য প্রথমে উদ্যোক্তাকে তার ব্যবসার জন্য একটি সুস্পষ্ট এবং কার্যকরী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য, বাজারের চাহিদা, সম্ভাব্য আয় এবং খরচের বিশদ বিবরণ থাকবে। এরপর, উদ্যোক্তাকে একটি উপযুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে যারা উদ্যোক্তা লোন প্রদান করে।
লোনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন পরিচয়পত্র, ব্যবসায়িক নিবন্ধন সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আর্থিক বিবৃতি এবং কর পরিশোধের নথি জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর ক্রেডিট স্কোর এবং ব্যবসার স্থায়িত্বও মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক জামানত বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি জমা দেওয়ার শর্ত রাখে।
আবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যবসার পরিকল্পনার ভিত্তিতে তার লোনের যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। সব শর্ত পূরণ হলে, ব্যাংক লোন মঞ্জুর করে এবং লোনের পরিমাণ, সুদের হার, এবং পরিশোধের সময়সীমা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি করা হয়।
আপনি যদি উদ্যোক্তা লোন গ্রহণ করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই এই লোন সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এই আর্টিকেল জুড়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে পোস্টটির নিচের দেওয়া সকল তথ্যগুলো ভালোভাবে পড়ে জেনে নিন।
উদ্যোক্তা লোন কি
উদ্যোক্তা লোন হলো একটি আর্থিক সহায়তা যা নতুন বা বিদ্যমান ব্যবসার প্রসার ও উন্নয়নের জন্য প্রদান করা হয়। এই লোন সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযোজ্য। যারা ব্যবসায়িক মূলধন সংকটে ভুগছেন বা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন। উদ্যোক্তা লোনের প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যবসার সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন।
উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও সমূহ সহজ শর্তে লোন প্রদান করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষত নারী উদ্যোক্তা এবং গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের জন্য কম সুদে লোনের সুবিধা দেওয়া হয়। এ ধরনের লোন উদ্যোক্তাদের মূলধন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করে, ফলে ব্যবসার সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
উদ্যোক্তা লোন কোথায় পাওয়া যায়
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন উৎস রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে লোন গ্রহণ করতে পারেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো, যেমন ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এসএমই (Small and Medium Enterprise) উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ লোন সুবিধা দিয়ে থাকে।
এসব ব্যাংক উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক মূলধনের জন্য প্রয়োজনীয় লোন প্রদান করে থাকে, যা ব্যবসার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে সহায়ক। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারিভাবে উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করেছে যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা কম সুদে ও সহজ শর্তে লোন নিতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও যেমন ব্র্যাক, আশা, ও গ্রামীণ ব্যাংক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাইক্রোফাইন্যান্স সেবা প্রদান করে থাকে।
বিশেষত গ্রামীণ ও নারী উদ্যোক্তারা সহজে এই লোনগুলো পেতে পারেন। আধুনিক সময়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন Bkash, ShopUp ইত্যাদি উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল লোন সুবিধা দিচ্ছে। যা ই-কমার্স ব্যবসা বা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এভাবে উদ্যোক্তা লোন সহজলভ্য হওয়ায় দেশের উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা গড়ে তোলার এবং সম্প্রসারণের সুযোগ পাচ্ছে।
উদ্যোক্তা লোন কাদের জন্য
উদ্যোক্তা লোন মূলত সেই ব্যক্তিদের জন্য যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান বা বিদ্যমান ব্যবসাকে আরও বড় করতে চান। এই লোনের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা মূলধন, কার্যক্রম, প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, কর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ হাতে পেতে পারে। উদ্যোক্তা লোন কাদের জন্য দেওয়া হয় তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য
- কে পেতে পারেনঃ যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান এবং তাদের ব্যবসার জন্য প্রাথমিক মূলধন প্রয়োজন সেই সকল নতুন উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ ব্যবসার জন্য কার্যকর মূলধন, মেশিনারিজ, অফিস বা দোকান স্থাপন, কর্মী নিয়োগ, এবং পণ্য বা সেবার প্রাথমিক পর্যায়ের বাজারজাতকরণ এর প্রয়োজনে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- উপকারিতাঃ নতুন উদ্যোক্তারা অনেক সময় নিজস্ব মূলধন না থাকার কারণে ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। উদ্যোক্তা লোন তাদের সেই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়াও নতুন উদ্যোক্তাদের এই লোনের আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার (SMEs) উদ্যোক্তাদের জন্য
- কে পেতে পারেনঃ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার (Small and Medium Enterprises - SMEs) মালিক যারা ব্যবসার প্রসার বা উন্নতি করতে চান সেই সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ বিদ্যমান ব্যবসাকে আধুনিকায়ন করা, নতুন সরঞ্জাম কেনা, আরো কর্মী নিয়োগ করা, বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- উপকারিতাঃ বিদ্যমান ব্যবসা যদি প্রসারিত করতে হয় তবে এই লোনের মাধ্যমে সেই প্রয়োজন মেটানো যায়।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য
- কে পেতে পারেনঃ বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা, যারা ব্যবসা শুরু করতে বা প্রসারিত করতে চান সেই সকল নারী উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ নারী উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় মূলধন, প্রযুক্তি এবং বাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।
- উপকারিতাঃ অনেক ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত এবং সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা করে থাকে, যাতে তারা আরও বেশি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন।
যুব উদ্যোক্তাদের জন্য
- কে পেতে পারেনঃ তরুণ উদ্যোক্তারা যারা নতুন এবং উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে কাজ করতে চান সেই সকল যুব বা তরুণ উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোগ শুরু করতে প্রয়োজনীয় অর্থ, মেশিনারিজ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উপকরণের জন্য এই লোন ব্যবহার করতে পারেন।
- উপকারিতাঃ অনেক সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে এবং কম সুদে এই লোন প্রদান করে।
স্টার্টআপ ফান্ডিং
- কে পেতে পারেনঃ যারা নতুন এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপ শুরু করতে চান, বিশেষ করে প্রযুক্তি ভিত্তিক বা অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে সেই সকল স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ প্রাথমিক পর্যায়ের পণ্য বা সেবার উন্নয়ন, কর্মী নিয়োগ, অফিস স্থাপন এবং ব্যবসার স্কেলিং এর প্রয়োজনে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- উপকারিতাঃ স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উদ্যোক্তা লোন নিয়ে তাদের ব্যবসাকে আরও দ্রুততার সাথে বাড়াতে পারেন।
বিশেষায়িত উদ্যোগ
- কে পেতে পারেনঃ যারা সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে চান সেই সকল বিশেষায়িত উদ্যোক্তারা এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
- লোনের প্রয়োজনীয়তাঃ সামাজিক উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন বা সরঞ্জাম ইত্যাদির প্রয়োজনে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।।
- উপকারিতাঃ সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে লোন পেতে কিছু ব্যাংক এবং NGO বিশেষ সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও বিশেষায়িত উদ্যোক্তাদের এই লোনের আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথমেই একটি শক্তিশালী "ব্যবসায়িক পরিকল্পনা" তৈরি করা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনায় আপনার ব্যবসার লক্ষ্য, পণ্য বা সেবা, বাজার বিশ্লেষণ, আয়ের পূর্বাভাস, এবং ব্যবসায়িক কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এরপর "উপযুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন" করতে হবে।
এমন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে যারা উদ্যোক্তা লোন প্রদান করে এবং তাদের শর্তাবলী আপনার ব্যবসার জন্য উপযোগী। নির্বাচনের পর তাদের সাথে যোগাযোগ করে "আবেদন ফরম পূরণ" করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন আপনার পরিচয়পত্র, ব্যবসার নিবন্ধন, কর বিবরণী এবং আর্থিক বিবৃতি প্রদান করতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রে "ব্যক্তিগত ক্রেডিট স্কোর" এবং ব্যবসার আর্থিক স্থিতিশীলতা যাচাই করা হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পরে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা এবং ক্রেডিট যোগ্যতা পর্যালোচনা করবে। তারপর সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার আবেদন মঞ্জুর হবে এবং আপনাকে "লোনের শর্তাবলী" সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।
উদ্যোক্তা লোন নেওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
উদ্যোক্তা লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজপত্রগুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত কিছু প্রধান ডকুমেন্ট প্রায় সব ক্ষেত্রেই জমা দিতে হয়। নিচে এই ডকুমেন্টগুলোর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
- ব্যক্তিগত পরিচয়পত্রঃ আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করতে হয়। বিকল্প হিসেবে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সও জমা দেওয়া যেতে পারে।
- ব্যবসায়িক নিবন্ধন সংক্রান্ত ডকুমেন্টঃ আবেদনকারী যদি একটি নিবন্ধিত ব্যবসা পরিচালনা করে তবে ব্যবসার নিবন্ধন শংসাপত্র (Trade License) জমা দিতে হবে। ব্যবসায়িক কর শোধের জন্য একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN সার্টিফিকেট) প্রয়োজন। যেটা ব্যাংক আপনার ব্যবসার আইনি কাঠামো যাচাই করতে ব্যবহার করে। এছাড়াও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট তথা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাটের রেজিস্ট্রেশন সনদও জমা দিতে হতে পারে।
- ব্যবসায়িক পরিকল্পনাঃ একটি সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। এই পরিকল্পনায় ব্যবসার উদ্দেশ্য, পণ্য বা সেবা, বাজার বিশ্লেষণ, প্রতিযোগিতার অবস্থা, বিক্রয় পূর্বাভাস, এবং আর্থিক পরিকল্পনা উল্লেখ থাকতে হবে।
- ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ আবেদনকারীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের গত ৬-১২ মাসের লেনদেনের বিবরণী জমা দিতে হয়। আর যদি ব্যবসা পূর্বে থেকেই চালু থাকে তবে ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাবের বিবরণী জমা দিতে হবে।
- আর্থিক বিবৃতিঃ ব্যবসার আয়ের উৎস এবং ব্যয় বিশ্লেষণ করতে আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। এবং ব্যবসার সম্পদ, দায়, এবং ইক্যুইটির সঠিক তথ্য তুলে ধরতে ব্যালান্স শীট জমা দিতে হবে। এছাড়াও ব্যবসায় নগদ অর্থের আগমন এবং বহির্গমন দেখানোর জন্য ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয়।
- ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক কর রিটার্নঃ আবেদনকারী এবং তার ব্যবসার কর রিটার্ন জমা দিতে হয় যেটার মাধ্যমে দেখা হয় যে আপনি কর সঠিকভাবে প্রদান করছেন কিনা এবং সঠিকভাবে আইনি দায়বদ্ধতা পালন করছেন কিনা।
- প্রপার্টি ডকুমেন্ট (যদি লোনের জন্য জামানত প্রয়োজন হয়): যদি উদ্যোক্তা লোনের জন্য জামানত দিতে হয়, তবে প্রপার্টি বা সম্পত্তির দলিল, মূল্যায়ন রিপোর্ট, এবং জমির খতিয়ান বা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে।
- ব্যবসায়িক অংশীদারের চুক্তি (যদি প্রযোজ্য হয়): যদি ব্যবসায় একাধিক অংশীদার থাকে তবে অংশীদারিত্বের চুক্তি জমা দিতে হবে। যেখানে সবার দায়িত্ব ও অংশীদারিত্বের ভাগ উল্লেখ থাকবে।
- লোন গ্রহণের পূর্ব অভিজ্ঞতা (যদি থাকে): পূর্বে কোনো লোন গ্রহণ করলে তার সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে। যাতে দেখা যায় যে আপনি পূর্বে ঋণের কিস্তি সঠিকভাবে পরিশোধ করেছেন কিনা।
- ক্রেডিট রিপোর্টঃ ব্যাংক সাধারণত আবেদনকারীর ক্রেডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে। যা তার লোনগ্রহণের ইতিহাস এবং লেনদেনের নির্ভরযোগ্যতা বোঝায়।
উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো হলো উদ্যোক্তা লোন নেওয়ার জন্য সাধারণত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস। তবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী কিছু ডকুমেন্টস যোগ বা বাদ হতে পারে।
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার যোগ্যতা
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করার জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং মানদণ্ড অনুসরণ করে। যোগ্যতা নির্ভর করে আবেদনকারীর ব্যবসার ধরন, আর্থিক অবস্থা, ক্রেডিট ইতিহাস এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর। সাধারণত যে বিষয়গুলো দেখে উদ্যোক্তা লোনের জন্য যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হয় তা নিচে দেওয়া হলো।
- বয়সঃ উদ্যোক্তা লোনের জন্য আবেদনকারীর বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হয়। তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বয়সসীমা ভিন্ন হতে পারে, যেমন যুব উদ্যোক্তা বা প্রবীণ উদ্যোক্তাদের জন্য।
- ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাঃ আবেদনকারী যদি আগে থেকে ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা রাখেন বা যদি তিনি পূর্বে কোনো সফল ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন তবে তার লোন পাওয়ার যোগ্যতা বাড়ে। আর যদি আপনি নতুন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকলে লোন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ব্যবসায়িক পরিকল্পনাঃ একটি সুসংগঠিত এবং বিশদ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে যেখানে ব্যবসার লক্ষ্য, বাজার বিশ্লেষণ, আর্থিক পূর্বাভাস এবং ব্যবসার সাফল্যের কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এবং ব্যবসাটি কিভাবে লাভজনক হবে ও কীভাবে লোন পরিশোধ করা হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- ক্রেডিট স্কোরঃ উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকতে হবে। সাধারণত ৬৫০ বা তার উপরের ক্রেডিট স্কোর ভালো হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য এই মান ভিন্ন হতে পারে। আগের লোনগ্রহণের ইতিহাস যদি ভালো হয় যেমন সময়মতো লোন পরিশোধ করা। তাহলে লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- ব্যাংক হিসাবের বিবরণঃ উদ্যোক্তার ব্যাংক লেনদেনের বিবরণ থেকে তার আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ব্যবসার স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন করা হয়। সাধারণত গত ৬-১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়।
- ব্যবসার বৈধতাঃ ব্যবসার আইনগত বৈধতা থাকতে হবে যেমন ট্রেড লাইসেন্স, কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN), ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যবসাটি আইনগতভাবে সঠিক হতে হবে এবং কোনো বেআইনি কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারবে না।
- ব্যবসার ধরণঃ ব্যবসাটি এমন হতে হবে যা লাভজনক এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিশ্চিত ব্যবসার ক্ষেত্রে লোন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশেষ করে সরকার অনুমোদিত খাতগুলোতে কাজ করা ব্যবসায়ী অনেক সময় বিশেষ সুবিধা পান।
- আর্থিক বিবৃতিঃ আয়-ব্যয়ের হিসাব (Income Statement): আপনার ব্যবসার আয়-ব্যয় এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব। এবং ব্যবসায়ের সম্পদ এবং দায় সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকতে হবে।
- জামানতঃ কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা লোনের জন্য জামানত দিতে হতে পারে যেমন সম্পত্তি, গাড়ি বা ব্যবসার যন্ত্রপাতি। জামানত দিলে ব্যাংকের ঝুঁকি কমে এবং লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিছু সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জামানতবিহীন উদ্যোক্তা লোনও প্রদান করে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য।
- প্রথমিক বিনিয়োগঃ অনেক ব্যাংক উদ্যোক্তা লোনের জন্য আবেদনকারীর নিজস্ব বিনিয়োগ থাকতে চায়। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি মোট প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজে প্রদান করতে পারেন তাহলে লোন পাওয়ার যোগ্যতা বেড়ে যায়।
- সুনাম এবং ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কঃ উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক সুনাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভালো সুনাম থাকলে লোন অনুমোদনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এবং ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক বা বাজারের সাথে ভালো সংযোগ থাকলে তা লোন পাওয়ার যোগ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই শর্তাবলী এবং মানদণ্ডগুলো উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু শর্তাবলী ভিন্ন হতে পারে, তাই লোনের জন্য আবেদন করার আগে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট শর্তাবলী সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্যোক্তা লোন কত টাকা পাওয়া যায়
উদ্যোক্তা লোনের পরিমাণ, সুদের হার, এবং পরিশোধের সময়সীমা মূলত নির্ভর করে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা, ব্যবসার ধরন এবং আবেদনকারীর প্রয়োজনের ওপর। সাধারণত উদ্যোক্তা লোনের পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ বা তার বেশি পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SMEs) বা স্টার্টআপের ক্ষেত্রে।
সুদের হার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন হতে পারে তবে সাধারণত ৭% থেকে ২০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা ব্যবসার ঝুঁকি, লোনের পরিমাণ এবং জামানত প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। পরিশোধের সময়সীমা ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে থাকে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৭ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায় বিশেষ করে বড় উদ্যোগগুলোর জন্য।
তবে নির্দিষ্ট শর্তাবলী এবং সুবিধা পেতে আবেদনকারীর উচিত আবেদনকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা।
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার জন্য আবেদন
উদ্যোক্তা লোন পাওয়ার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াটি কিছু ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে, আবেদনকারীকে একটি সুসংগঠিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য, বাজার বিশ্লেষণ, পণ্য বা সেবা, আর্থিক পূর্বাভাস এবং সম্ভাব্য লাভজনকতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
এরপর, উপযুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। এমন ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে যে ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন প্রদান করে এবং তাদের শর্তাবলী লোনা আবেদনকারীর ব্যবসার জন্য উপযোগী। তারপর লোনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে, সাথে ব্যবসার নিবন্ধন সনদ, পরিচয়পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়-ব্যয়ের হিসাব, ক্রেডিট রিপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।
কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সম্পত্তি বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি জামানত হিসেবে দিতে হতে পারে। আবেদন জমা দেওয়ার পর, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, ব্যবসার পরিকল্পনা এবং যোগ্যতা মূল্যায়ন করবেন। তারপর যদি সবকিছু সঠিক থাকে তাহলে লোন মঞ্জুর করা হবে এবং নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী লোন প্রদান করা হবে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের এই আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করেছি উদ্যোক্তা লোন নিয়ে। এই আর্টিকেলে উদ্যোক্তা লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যা আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমরা এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের লোন সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করি। এমনই লোন সম্পর্কিত ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url