কৃষি ব্যাংক লোন কৃষকদের জন্য সহজ সল্যুশন
পোস্ট সূচীপত্র
ভূমিকা
কৃষি ব্যাংকের পরিচয়
কৃষি ব্যাংক লোন
কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার নিয়ম
- আবেদনপত্র পূরণঃ লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। তার জন্য আবেদনপত্রটি আপনার নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের শাখা থেকে সংগ্রহ করতে নিতে পারেন বা তাদের ওয়েবসাইট থেকেও ডাউনলোড করতে নিতে পারেন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাঃ লোন আবেদন এর সাথে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জমির মালিকানার প্রমাণপত্র, জমির দলিল, খাজনা রশিদ, ব্যাংক হিসাবের তথ্য এবং ছবি সহ আরো বেশ কিছু জিনিসের আপনার প্রয়োজন হবে।
- ব্যাংকের মূল্যায়নঃ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জমা বা প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল্যায়ন করে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা আপনার জমি বা প্রকল্প পরিদর্শন করতে পারে।
- লোনের অনুমোদনঃ যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যাংক আবেদনটি অনুমোদন করবে। যদি সমস্ত শর্ত পূরণ হয় এবং আপনি এই লোনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন তাহলে লোনের অর্থ নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
- লোন বিতরণঃ লোনের অনুমোদনের পর ব্যাংক নির্ধারিত হিসাবে বা সরাসরি আপনার হাতে লোনের অর্থ বিতরণ করবে। বিভিন্ন ধরনের লোনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে অর্থ বিতরণ হতে পারে, যেমন চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে।
কৃষি ব্যাংক থেকে কি কি খাতে লোন গ্রহণ করা যায়
- শস্য ঋণঃ ধান, গম, পাট ইত্যাদি শস্য চাষের জন্য বীজ, সার, কীটনাশক কেনার জন্য কৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
- মৎস্য ঋণঃ পুকুর খনন, মাছের পোনা কেনা, খাবার ইত্যাদির জন্য কৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
- পোল্ট্রি ও ডেইরি ঋণঃ মুরগি, গরু, ছাগল পালনের জন্য খামার গড়ার, খাবার কেনার জন্যকৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
- কৃষি যন্ত্রপাতি ঋণঃ ট্র্যাক্টর, হাল, কম্বাইন ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য কৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
- শস্য গুদামজাতকরণ ঋণঃ উৎপাদিত শস্য গুদামে রাখার জন্য কৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
- কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রকল্প ঋণঃ আটা চালের মিল, দুধের প্যাকেজিং ইত্যাদি কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রকল্প গড়ার জন্য কৃষি ব্যাংক এই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকেন।
কৃষি ব্যাংকে লোন পরিশোধের নিয়ম
- কিস্তি আকারে পরিশোধঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংক লোন কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়। কিস্তির সংখ্যা এবং পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় লোনের ধরন এবং পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে। কিস্তিগুলো মাসিক, ত্রৈমাসিক বা অর্ধ-বার্ষিক আকারে হয়ে থাকে।
- ফসল কাটার পরে পরিশোধঃ কৃষি লোনের ক্ষেত্রে অনেক সময় কৃষকরা ফসল কাটার পর লোন পরিশোধের সুবিধা পান। এটি ফসল উৎপাদনের পর আয়ের ভিত্তিতে লোন শোধ করতে সুবিধা দেয়। ফসল বিক্রি করে আয় করার পর কৃষকরা সহজেই লোন পরিশোধ করতে পারেন।
- লোনের সময়সীমাঃ কৃষি ব্যাংক সাধারণত স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি আকারে লোন প্রদান করে থাকে। স্বল্পমেয়াদি লোন সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। মধ্যমেয়াদি লোন ৩-৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এবং দীর্ঘমেয়াদি লোন ৫ বছরের অধিক সময়ে পরিশোধ করতে হয়। সময়সীমা নির্ভর করে লোনের ধরন এবং প্রকল্পের ওপর।
- অগ্রিম পরিশোধের সুযোগঃ যদি কেউ চায়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরো লোনের অর্থ পরিশোধ করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতের সুদ খরচ কমে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে আগাম পরিশোধের জন্য শর্ত থাকতে পারে যেমনঃ কিছু অতিরিক্ত চার্জ বা ফি।
- নগদে পরিশোধঃ আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আপনার লোন পরিশোধ করতে পারেন।
- চেকের মাধ্যমে পরিশোধঃ আপনি চাইলে ব্যাংকের পক্ষে নির্ধারিত চেক দিয়ে লোন পরিশোধ করতে পারেন।
- অনলাইনে পরিশোধঃ অনেক ব্যাংকই এখন অনলাইন ব্যাঙ্কিং সুবিধা প্রদান করে যেখানে আপনি আপনার লোন অনলাইনেই পরিশোধ করতে পারবেন। সেজন্য আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে এই লোন পরিশোধ করতে পারেন।
- মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধঃ অনেক ব্যাংকই মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপের মাধ্যমে লোন পরিশোধের সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই আপনি চাইলে কৃষি ব্যাংকের অনলাইন অ্যাপস ব্যবহার করেও লোন পরিশোধ করতে পারেন।
কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার যোগ্যতা
- কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা হওয়াঃ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে প্রথমে আপনাকে কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা হতে হবে। যারা সরাসরি কৃষি কার্যক্রম, গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন বা কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন তারা এই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারেন।
- জমির মালিকানার প্রমাণঃ আপনার জমির মালিকানার বৈধ প্রমাণ থাকতে হবে। যেমন খতিয়ান, জমির দলিল এবং জমির খাজনা রশিদ জমা দিতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে জমি লিজ নিয়ে কৃষি কাজ করলেও লোন পাওয়া যায়।
- লোনের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হওয়াঃ আপনাকে লোন গ্রহণের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং আপনি লোনটি কোন খাতে ব্যবহার করা হবে সেটি নির্দিষ্ট করতে হবে। যেমন ফসল উৎপাদন, গবাদি পশু পালন, সেচের ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য লোন নেওয়া হচ্ছে কিনা তা উল্লেখ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাঃ যদি আপনি আবেদনকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ২/৩ কপি ছবি, জমির মালিকানার প্রমাণ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- আর্থিক স্থিতিশীলতা ও ক্রেডিট রেকর্ডঃ এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং পূর্ববর্তী লোনের রেকর্ড যাচাই করবে। যদি আপনি এর আগেও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকে এবং সঠিকভাবে পরিশোধ করে থাকেন তাহলে নতুন লোন পাওয়ার যোগ্যতা বাড়বে।
- জমা বা গ্যারান্টিঃ অনেক ক্ষেত্রে লোনের বিপরীতে কিছু জমা বা গ্যারান্টি দেওয়া লাগে। এটি নির্ভর করে লোনের পরিমাণ এবং প্রকৃতির ওপর। ছোট লোনের ক্ষেত্রে গ্যারান্টির প্রয়োজন নাও হতে পারে তবে বড় লোনের জন্য জমি বা অন্য কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়।
- কৃষি ব্যাংকের নির্ধারিত শর্তাবলী মেনে চলাঃ আপনাকে কৃষি ব্যাংকের নির্ধারিত শর্তাবলী মেনে চলতে হবে। যেমন সঠিক খাতে লোনের ব্যবহার করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে লোন পরিশোধ করা ইত্যাদি।
- ব্যাংকের পরিদর্শন ও মূল্যায়নঃ লোনের আবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনার জমি বা প্রকল্প পরিদর্শন করতে পারে এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। যদি প্রকল্পটি সম্ভাবনাময় এবং সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার উপযোগী মনে হয় তাহলে লোন অনুমোদন দেওয়া হবে।
- প্রথমবারের আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ সুযোগঃ যদি আপনি প্রথমবার লোন আবেদন কি করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক বিশেষ সুবিধা বা শর্ত শিথিল করবে। যাতে আপনি তারা সহজে লোন পেতে পারেন।
FAQ
কৃষি ব্যাংক কি সরকারি
হ্যাঁ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি সরকারি ব্যাংক। এটি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যাংকটি মূলত কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং কৃষি খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কাজ করে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সরকারের মালিকানাধীন এবং সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। এই ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে লোন এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদান করা হয়।
কৃষি ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা লোন নেওয়া যায়
কৃষি ব্যাংক থেকে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা লোন নিতে পারবেন সেটা নির্ধারিত হয় বিভিন্ন কারণের উপর। কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই যে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা নিতে পারবেন। লোনের ধরণ, প্রকল্পের ধরন, পরিশোধের সময়সীমা এবং আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে কত টাকা লোন পাবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুদের হার কত
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুদের হার নির্ভর করে লোনের ধরন, প্রকল্পের আকার এবং আবেদনকারীর যোগ্যতার ওপর। সাধারণত কৃষি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংকটি কম সুদে লোন প্রদান করে। ফসল উৎপাদন, গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের জন্য সাধারণত সুদের হার ৭% থেকে ৯% এর মধ্যে থাকে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে বিনিয়োগের জন্য এই হার ৮% থেকে ১০% পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বা প্রণোদনা প্রকল্পের আওতায় আরও কম সুদে লোন পাওয়া যেতে পারে, যা ৫% পর্যন্ত হতে পারে। সুদের হার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং সরকারের নীতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url