প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সহজে লোন গ্রহণের নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন ও শাখা সমূহপ্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ, কারা পাবেন, কত টাকা দেয়, সুদের হার সহ মেয়াদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আর্টিকেল।
আপনারা যারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন করতে চান কিন্তু তার আগে এই লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে আজকের এই পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। কারণ এই আর্টিকেলে আমরা এই লোনের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই সকল বিষয়গুলো জানতে পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র
- ভূমিকা
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন কারা পাবেন
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
- অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন/ঋণ
- পুনর্বাসন লোন/ঋণ
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন/ঋণ
- বিশেষ পুনর্বাসন লোন/ঋণ
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের সুদের হার
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের মেয়াদ ও পরিমাণ
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জামিনদারের যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুবিধা
- লেখকের মতামত
ভূমিকা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সরকারি অধীনস্থ একটি ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হলো প্রবাসীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা। বিদেশে চাকরির জন্য হোক বা বিদেশ থেকে দেশে এসে কোন ব্যবসায়িক কাজের নিয়োজিতর জন্য হোক এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে। এই ব্যাংকের ১২০টি শাখা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই ব্যাংকের অনুমোদিত এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকারও বেশি।
টাকার অংকটা শুনেই বোঝা যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন দেওয়ার সক্ষমতা কতটা। অনেকেই বিদেশে যাবার জন্য বা বিদেশ থেকে দেশে আসার পর ব্যবসার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায় জানতে চাই। তাই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে এই ব্যাংক থেকে কোন প্রসেসে লোন দেয় তার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কিত সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কারণ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে এই লোনের সকল বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। তাই এই লোন সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি সরকারি ব্যাংক। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূল লক্ষ্যই হল সহজ শর্তে দ্রুত সময়ের মধ্যে লোন এর মাধ্যমে প্রবাসীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১০ সালে ১০০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করে। প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের লোন প্রদান করে থাকে।
যে সকল মানুষেরা কর্মের জন্য বিদেশে যেতে চাই কিংবা প্রবাস থেকে দেশে এসে কোন ব্যবসা করতে চাই তাদেরকে মূলত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আর্থিকভাবে সাহায্য করে থাকে বা লোন দিয়ে থাকে। এই ব্যাংক তাদেরকে সহজ শর্তে ও জামানতবিহীন লোন/ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন কারা পাবেন
যারা প্রবাসে যেতে চাচ্ছেন এবং যারা প্রবাসে বসবাস করছেন তারা সকলে এই লোন পাওয়ার অধিকারী। যাদের এই লোন পাওয়ার যোগ্যতা আছে কেবল তারাই এই লোন সুবিধা পাবেন। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- লোন আবেদনকারী কে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে।
- আবেদনকারী যেই শাখায় লোন আবেদন করেছেন তাকে অবশ্যই সেই শাখার বাসিন্দা হতে হবে।
- লোন আবেদনকারী কোন ব্যাংকে বা এনজিও এর সাথে লোন পরিশোধ না করার কোন রিপোর্ট থাকলে তাকে লোন দেওয়া হবে না।
- সর্বোচ্চ দুইজন জামিনদার থাকতে হবে আবেদনকারীর এবং তাদের জন্য লোন পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকে।
- পূর্ণবাসন লোনের ক্ষেত্রে লোন আবেদনকারী দেশে এসে কি ধরনের কাজ করছেন সেই সম্পর্কে ঠিকানা ও উদ্দেশ্য সহ জমা দিতে হবে।
- অভিবাসন লোনের ক্ষেত্রে বিদেশে যেই ধরনের কাজে বৈধ ভিসা পাওয়া যায় আবেদনকারীকে অবশ্যই সেই ধরনের ভিসা পেতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- লোন আবেদনের পূর্বে ব্যাংকের ওয়েবসাইট অথবা শাখায় গিয়ে লোনের নীতিমালা এবং শর্তাবলী সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
- লোনের জন্য আবেদন পত্রটি ভালো এবং সঠিকভাবে পূরণ করে তার সাথে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত ফটোকপি সহ জমা করে দিতে হবে।
- লোনের পরিমাণ লোন গ্রহীতার ইনকামের ওপর নির্ভর করবে।
- লোনের সুদের হার বর্তমান বাজারজাত হার অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
- লোনের মেয়াদ লোনের ধরন এবং পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে।
- লোন গ্রহীতাকে লোনের কিস্তি সঠিক ও সময়মতো পরিষদ করতে হবে।
- লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে বিলম্ব হলে জরিমানা এবং অন্যান্য আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
আর্টিকেলের উপরোক্ত আলোচনায় এতক্ষণ আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের বেশ কিছু আনুষঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেছি। এবার নিচের অংশে আমরা আলোচনা করব প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম নিয়ে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এই ব্যাংক থেকে লোন নেবার জন্য কি কি নিয়ম ফলো করতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে
আপনার ও আপনার জামিনদানের প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র দরকার হবে। এই ব্যাংক থেকে লোন পেতে কি কি কাগজপত্র/ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়বে তা আমরা এই আর্টিকেলের নিচের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
একাউন্ট খোলাঃ এই ব্যাংক থেকে লোন/ঋণ গ্রহণের জন্য আপনার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকতে হবে। আপনার বসবাসরত এলাকার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় একটি সেভিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কারণ এই ব্যাংক লোনের টাকা নগদ হাতে দেয় না। তারা ব্যাংকের ট্রান্সফার করে দেয়।
আবেদন ফরম পূরণঃ এরপর আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পেতে এই ব্যাংকের আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আপনি এই আবেদন ফরম ব্যাংকের শাখায় গেলেই তারা বিনামূল্যে দিয়ে দিবে। আবার আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আবেদন ফরম ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আবেদনপত্র জমাদানঃ আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্য গুলো সঠিকভাবে পূরণ করার পরে তাদের শর্তাবলী অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন পত্রটি ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় গিয়ে জমা দিতে হবে।
ঋণ গ্রহণ/ঋণ বাতিলঃ আবেদনপত্রটি জমা দেওয়ার পরে ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মরত কর্তৃপক্ষরা আপনার আবেদনকৃত আবেদন পত্রটি যাচাই-বাছাই করে করে দেখবেন। যদি আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক হয় এবং এই লোনের জন্য আপনি যদি উপযুক্ত হন তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে আর আবেদনে যদি ঝামেলা থাকে তাহলে বাতিল করে দেয়া হবে।
মূলত এই নিয়মগুলো অনুসরণ করেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে পারবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম
অনলাইন থেকে কিংবা আপনি সরাসরি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যে কোন শাখায় গিয়ে লোন আবেদন করার ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। কেননা লোন আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আগের লোনের ফরম সংগ্রহ করতে হবে। অনেকে আছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান কিন্তু কোথা থেকে ফর্ম আনতে হয় এবং কিভাবে ফরম পূরণ করতে হয় এই সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।
আপনি সরাসরি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গিয়ে লোন আবেদন করার ফরম চাইলে তারা আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ফরম দিয়ে দিবে। অথবা আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইন এর মাধ্যমেও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বেশ কিছু খাতে লোন প্রদান করে থাকে। নিচে উল্লেখ করা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোন কোন ক্ষেত্রে লোন সেবা প্রদান করে থাকে।
- অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন/ঋণ
- পুনর্বাসন লোন/ঋণ
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন/ঋণ
- বিশেষ পুনর্বাসন লোন/ঋণ
- কর্মসংস্থান লোন/ঋণ
- গৃহ লোন/ঋণ
- শিক্ষা লোন/ঋণ
- ব্যবসায়িক লোন/ঋণ
- কৃষি লোন/ঋণ
- স্বল্প মেয়াদী লোন/ঋণ
- দীর্ঘমেয়াদী লোন/ঋণ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক উপরোক্ত এতগুলো খাতে লোন দিয়ে থাকলেও মূলত ৪ ধরনের লোনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এই ৪ ধরনের লোন বেশি জনপ্রিয়। নিচে সেই ৪ প্রকারের লোনের নাম সহ এই লোন গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১. অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন/ঋণ
২. পুনর্বাসন লোন/ঋণ
৩. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন/ঋণ
৪. বিশেষ পুনর্বাসন লোন/ঋণ
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন/ঋণ
বাংলাদেশের নাগরিক যদি চাকরি বা কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চাই অথবা প্রবাসী যদি বিদেশি চাকরিরত অবস্থায় দেশে ছুটিতে এসে আবার বিদেশ যেতে চাই তাহলে সেই ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন সুবিধাটি নিতে পারবে। এজন্য নতুন ভিসা অথবা রি-এন্টি ভিসার জন্য ১ থেকে ৩ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত এই লোনে গ্রহণ করতে পারবে। এই লোন পরিশোধের সময়সীমা ২ মাস হতে ৩ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অভিবাসন ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণকৃত আবেদন ফরম
- বিদেশ যাত্রার টিকিটের সদ্য ছবি সহ ফটোকপি
- পাসপোর্ট এর সদ্য ছবিসহ ফটোকপি
- ভিসার সদ্য ছবিসহ ফটোকপি
- কর্মসংস্থানের প্রমাণপত্র যেমন (ওয়ার্ক পারমিট, অফার লেটার ইত্যাদি)
- লোনের পরিমাণ অনুযায়ী জামানত যেমন (সম্পত্তি বন্ধক)
- বৈধ আইডি কার্ডের ফটোকপি (ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি)
পুনর্বাসন লোন/ঋণ
কোন একজন ব্যক্তি যদি বৈধভাবে বিদেশ যেয়ে থাকে বা বৈধ প্রবাসী হয়ে থাকে আর যদি সে কোন কারণ বশত দেশে ফেরত আসে এবং দেশে থেকে কোন কর্ম বা উদ্যোক্তা হতে চাই তাহলে সে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে পুনর্বাসন লোন সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবে। এই লোনের আবেদনকারীর সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দেওয়া হয়। কিন্তু এই লোন জামানতবিহীন ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে থাকেন। এই লোনের মেয়াদ সীমা সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত হয়।
পুনর্বাসন লোনের/ঋণের জন্য প্রয়োজনেও কাগজপত্রঃ
- সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণকৃত আবেদন ফরম
- পাসপোর্ট সদ্য ছবি সহ ফটোকপি
- বিশেষ সদ্য ছবি ফটোকপি
- লোনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
- প্রবাসীর আয়ের প্রমাণ যেমন (পে স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি)
- লোনের পরিমাণ অনুযায়ী জমানোর (সম্পত্তি বন্ধক)
- বৈধ আইডি কার্ডের ফটোকপি (ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি)
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন/ঋণ
প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা যেমন, বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ইত্যাদি পরিজনেরা বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবে। এই লোন বিভিন্ন খাতে দেয়া হয় যেমন, কৃষি ঋণ, মৎস্য চাষ, মুরগির খামার, সৌর জ্বালানি, বায়োগ্যাস প্লান্ট, নারী উদ্যোক্তা, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে এই লোন প্রদান করা হয়। এই লোনের পরিমাণ ও মেয়াদ সীমা অন্যান্য লোনের মতই হয়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন গ্রহণের ডকুমেন্টঃ
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ও ৩ টি ছবি।
- ট্রেড লাইসেন্স এর কপি।
- জামিনদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
- ব্যবসার জায়গা ও ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট।
- জামিনদার এবং আবেদনকারীর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদপত্র।
- প্রকল্পের ১ বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব।
- স্বাক্ষরিত ৩ টি চেকের পাতা ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
- যদি পূর্বে কোন প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকে তাহলে সেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জায়গা সার্টিফিকেট।
বিশেষ পুনর্বাসন লোন/ঋণ
প্রবাসীরা যখন বিশেষ কোন কারণবশত বিদেশের মাটি ছেড়ে দেশে চলে আসেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন করেন। তখন তাকে এই লোনের সুবিধাটি দেওয়া হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ বিদেশরত প্রবাসী কোন কারণবশত চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে চলে আসলে তার পুনর্বাসনের জন্য তখন তাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিশেষ পুনর্বাসন লোন দিয়ে থাকে।
বিশেষ পুনর্বাসন লোন/ঋণ গ্রহণের জন্য ডকুমেন্টঃ
- আবেদনকারীর বৈধ পথে রিভিডেন্স প্রেরণের ডকুমেন্ট বা পাসপোর্ট অথবা বিদেশে চাকরিচ্যুত পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি এবং পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি দিতে হবে।
- জামিনদারের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ছবি এবং দুই কপি ছবি জমা দিতে হবে।
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- প্রকল্পের ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।
- যদি দোকান ভাড়ার হয় তাহলে দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র আর যদি নিজের হয়ে থাকে তাহলে প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- লোন গ্রহণকারীকে তার নিজের স্বাক্ষরিত ৩ টি চেক বইয়ের পাতা জমা দিতে হবে।
- প্রকল্পের নাম, ব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেয়া হচ্ছে সেই সব টাইপের কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের সুদের হার
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের নিয়ম ২০২৪ এ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের লোনের ক্ষেত্রে নানা রকম সুদের হার এবং মেয়াদ সীমান নির্ধারণ করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের প্রবাসী ভাই ও বোনেদের সুবিধার্থে সর্বনিম্ন সুদের হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিচে আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
- অভিবাসনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের অভিবাসন লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ % ও লোন এর মেয়াদ সীমা ২ বছর করে দিয়েছেন।
- পূর্ণবাসনঃ এই ব্যাংক পূর্ণবাসন লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯% ও মেয়াদ সীমার ১০ বছর করে দিয়েছেন।
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবারঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোনের জন্য সুদের হার ৯% ও লোনের মেয়াদ সীমা ১০ বছর করে দিয়েছেন।
- বিশেষ পূর্ণবাসনঃ বিশেষ পূর্ণবাসন লোনের জন্য সুদের হার ৪% ও লোনের মেয়াদ সীমা ৫ বছর করেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের মেয়াদ ও পরিমাণ
আবেদনকারীর আয়, ঋণের উদ্দেশ্য, ঋণের ধরন, ঋণের পরিমাণ এবং জামিনদারের উপর নির্ভর করে যে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা ঋণ পাবেন। সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। ঋণের পরিমাণ, ঋণের ধরন এবং আরো বিভিন্ন বিষয়াদির ওপর নির্ভর করে যে লোনের মেয়াদ কত হবে। তবে এই লোনের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অভিবাসনঃ এই লোন ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে এবং এর মেয়াদ ২ বছর।
- পূর্ণবাসনঃ এই লোন সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তারা দিয়ে থাকে এবং এর মেয়াদ সীমা ১০ বছর।
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবারঃ সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে এবং মেয়াদ ১০ বছর (সম্ভবত)
- বিশেষ পূর্ণবাসনঃ এই লোন ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তারা দিয়ে থাকে এবং মেয়াদ ৫ বছর।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যে সকল বাংলাদেশের নাগরিকগণ বিদেশে যেয়ে প্রবাসী হয়ে বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি অথবা প্রবাস থেকে দেশে এসে ব্যবসা কিংবা নিজে উদ্যোক্তা হতে চাই তারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবে। আর তার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হল।
- জাতীয় পরিচয় পত্রঃ এই লোনের জন্য আবেদনকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- পাসপোর্টঃ বৈধ পাসপোর্ট এর ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- ভিসাঃ এই লোন আবেদনকারীর বাধ্যতামূলক ভিসা দেখাতে হবে।
- ছবিঃ সদ্য তোলা ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন হবে।
- কোম্পানির নিয়োগ পত্রঃ যে প্রতিষ্ঠানে বা যে কোম্পানিতে জয়েন করবেন সে কোম্পানির নিয়োগ পত্র দেখানোর প্রয়োজন পড়বে।
- নাগরিকত্বের সনদঃ ইউনিয়ন, পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশন যার আন্ডারেই বাস করেন সেখানকার নাগরিকত্বের সনদপত্র দেখাতে হবে।
- জামিনদারঃ আত্মীয়-স্বজন অথবা পাড়া প্রতিবেশী কিংবা আপনি যাকে চান তাকে জামিনদার করতে পারবেন। কিন্তু জামিনদারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে এবং দুইজন জামিনদার প্রয়োজন হবে।
- ঠিকানার প্রমাণঃ আপনার সঠিক ঠিকানার প্রমাণের জন্য আপনার বাড়ির বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি ইত্যাদি বিলের রশিদ লাগবে।
- ঋণের উদ্দেশ্যর প্রমাণঃ আপনি কি জন্য বাকি কারণে কিংবা কোন কাজের জন্য এই লোন গ্রহণ করবেন তার প্রমাণ দেখাতে হবে যেমন, ভর্তি কার্ড, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ইত্যাদি।
জামিনদারের যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে
- NID card অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- নাগরিকত্বের সনদ
- লোন পরিশোধ করার অঙ্গীকার নামা
- যেকোনো একজন জামিনদারের ব্যাংক এর ৩টি চেকের পাতা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুবিধা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। নিচে সেইসব সুবিধাগুলো দেওয়া হয়েছে।
- বিদেশে গিয়ে এই লোন পরিশোধ করা যাবে।
- অন্যান্য ব্যাংকের থেকে সুদের পরিমাণ কম হয়।
- বিদেশে থাকা অবস্থায় কোন সমস্যায় পড়লে অথবা আর্থিক সংকটে পড়লে এই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করা যায়।
- বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আবার বিদেশে যেতে চাইলে এক্ষেত্রেও এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
- প্রবাসীরা দেশে এসে কোন ব্যবসায়ী নিয়োজিত হতে চাইলে এখান থেকে লোন গ্রহণ করার সুবিধা পাওয়া যায়।
- বিনা কিছু জামানতে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায় এবং জামানতে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।
- দীর্ঘ মিয়াদে এই লোন পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে।
- সহজ শর্তে লোন প্রদান করে থাকে।
- এছাড়াও আরো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায় বা নিয়ম সহ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে। আশা করি উপরোক্ত আলোচনাগুলো সবগুলো করেছেন। আমরা এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবামূলক আর্টিকেল শেয়ার করে থাকি। এমনি সব লোন ও ব্যাংকিং সেবামূলক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url