ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সহজে লোন গ্রহণের নিয়মইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি, ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম ও ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির সুবিধা সহ এই ব্যাংকের প্রবাসী লোন সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল।
তাই আপনারা যারা বিদেশে আছেন অথবা বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন এবং ভাবছেন ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন গ্রহণ করবেন, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ এই লোন নেওয়ার আগে এই লোন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী। আর এই আর্টিকেলে আমরা এই প্রবাসী লোন সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছি। তাই বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র
- ভূমিকা
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কত টাকা দেয়
- ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কোন কোন খাতে প্রদান করে
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি নেওয়ার যোগ্যতা
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পরিশোধের সময়
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- ইসলামী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
- ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির সুবিধা
- লেখকের মতামত
ভূমিকা
ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে কোন ইসলামী ব্যাংকে লোন দেয় না, তারা ইনভেসমেন্ট বা বিনিয়োগ করে থাকে। এবং তারা সুদ গ্রহণ করেন না, এই ইনভেসমেন্টের একটি নির্দিষ্ট পারসেন্ট লভ্যাংশ নিয়ে থাকে। প্রবাসী লোন ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের একটি খাত যা প্রবাসীদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার পদ্ধতি, কত টাকা দেয়, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, কোন কোন খাতে এই লোন দিয়ে থাকে।
এছাড়াও এই লোন নেয়ার যোগ্যতা বা কারা পাবে, পরিশোধের সময়সীমা এবং ইন্টারেস্ট রেট সহ আবেদন করার নিয়ম ও এই লোন পদ্ধতির সুবিধা গুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আর্টিকেলটি। তাই আপনারা যারা এই লোন সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে এই লোন করতে চান। তারা এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণটা পড়ুন।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি মূলত প্রবাসী কর্মরত বাংলাদেশীদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনিয়োগ বা বাড়ি নির্মাণ কিংবা বাবসা চালু করা অথবা অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করা।
ইসলামী ব্যাংকের এই প্রবাসী লোন পদ্ধতি ইসলামিক শরিয়াহ আইন মেনে পরিচালিত হয়ে থাকে। সেজন্য এতে সুদের পরিবর্তে নির্ধারিত ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ করা হয়। নিচে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কত টাকা দেয়
আসলে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কত টাকা দেয় এটা সম্পূর্ণটা নির্ভর করে লোন গ্রহীতার মাসিক আয় বা বেতনের উপর। কারণ লোন গ্রহীতার মাসিক আয় বা বেতন অনুযায়ী লোনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। আবার গ্রাহক কত টাকা লোন পাবে সেটা লোনের ধরণের উপর নির্ভর করে। লোনটি কি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে নাকি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত খরচের জন্য নেয়া হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে লোনের পরিমাণ ধার্য করা হয়।
এছাড়াও লোনটি কত সময়ের জন্য লোন নিতে চাচ্ছে এটার পরেও প্রভাব পড়ে যে ব্যাংক আপনাকে কত টাকা লোন দিবে। আবার আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা লোন পাবেন তা নির্ভর করে আপনার জামানত বা গ্যারেন্টারের ওপর ভিত্তি করে। তাই ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কত টাকা দেয় এটা সঠিকভাবে বলা মুশকিল।
কিন্তু আপনি যদি তাদের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে পারেন এবং এই ব্যাংকের শর্তাবলী ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আপনার চাহিদা মাফিক লোন বা ইনভেসমেন্ট/বিনিয়োগ নিতে পারবেন। তবে সাধারণত ইসলামী ব্যাংক ৫ লক্ষ থেকে শুরু করে আরো অনেক বেশি পরিমাণ পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে। আপনি যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চান তাহলে সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের নিকটস্থ যেকোনো শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে হলে আপনার কিছু ডকুমেন্ট বা নথির প্রয়োজন হবে। এই ডকুমেন্ট গুলো বা নথি গুলো দাঁড়াই ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। প্রবাসী লোন পেতে ইসলামী ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- যে সকল বাংলাদেশী মানুষেরা বিদেশে গেছেন কিংবা পূর্বে থেকেই বিদেশে আছেন তারা চাইলে তাদের ভিসা ও পাসপোর্ট দিয়ে এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে।
- বর্তমান ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট এর ফটোকপি জেতার দ্বারা প্রমাণ করে যে আপনি বৈধভাবে বিদেশে বসবাস করছেন ও কাজ করছেন।
- প্রবাসী বাংলাদেশির নিজের বা পরিবারের সদস্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- প্রবাসীর আয়ের সনদপত্র যেমন, সেলারি স্লিপ, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আয়ের সনদ ইত্যাদি সহ আয়ের উৎসের বিবরণ দিতে হবে।
- প্রবাসীর বিদেশে অথবা দেশে থাকা ব্যাংক একাউন্টের সাম্প্রতিক ৬ অথবা এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর প্রয়োজন হবে।
- প্রবাসীর পরিবার কিংবা নিকট আত্মীয়দের পরিচয় পত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যিনি প্রবাসীর লোন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে।
- যদি লোনের জন্য জামানত হিসেবে সম্পত্তি জানানো চাওয়া হয় তাহলে সেই সম্পত্তির দলিল, জমির রেজিস্ট্রেশন কাগজপত্র, খতিয়ান সহ আরো অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
- প্রবাসে যে কোম্পানিতে বা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সেখানকার নিয়োগপত্র অথবা চুক্তিপত্র এর প্রয়োজন হবে।
- প্রবাসী লোন কোন উদ্দেশ্য নিবেন এবং লোনকৃত অর্থ কোন খাতে ব্যবহার করবেন তার বিবরণ দিতে হবে। যেমন, বাড়ির নির্মাণের জন্য কিংবা ব্যবসার জন্য লোন নিয়ে থাকলে আপনাকে তার বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
এছাড়াও আবেদনকারের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে, ইসলামী ব্যাংকে অবশ্যই একটি একাউন্ট থাকতে হবে। দুইজন গ্যারেন্টার এর প্রয়োজন হবে এই গ্যারেন্টার আপনার পরিচিত যে কেউ হতে পারে কিন্তু মনে রাখবেন গ্যারেন্টারকে অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন পড়বে, আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন পড়বে। আশা করি একটি ধারণা পেয়েছেন প্রবাসী লোন পেতে ইসলামী ব্যাংক কি কি ডকুমেন্ট নিয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন কোন কোন খাতে প্রদান করে
ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে বিভিন্ন খাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য লোন সেবা চালু করেছে, যা প্রবাসীদের আর্থিক চাহিদা পূরণে সহযোগিতায় ভূমিকা রাখে। সাধারণত নিম্নোক্ত খাতে প্রবাসী লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
- প্রবাসীরা বাংলাদেশের নিজ এলাকায় বা শহরে বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয়ের জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে। এই লোনের মাধ্যমে তারা জমি কিনতে, বাড়ি নির্মাণ করতে বা সম্পূর্ণ বাড়ি কিনতে পারবে।
- যে সকল প্রবাসীরা দেশে জমি কিনতে চান, তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোনের সুযোগ দিচ্ছে। এতে তারা জমি কিনে ভবিষ্যতে নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে।
- প্রবাসীরা দেশে নতুন ব্যবসা শুরু করতে বা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে পারবে। এই লোন মূলধন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসার অন্যান্য খাতে ব্যয় করতে সাহায্য করে থাকে।
- প্রবাসী কর্মীদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার খরচ মেটানোর জন্যও ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন প্রদান করে থাকে। যাতে প্রবাসীদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশে বা দেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।
- প্রবাসীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে যেমন কৃষি, উৎপাদনশীল খাত, সেবা খাত ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক থেকে এই প্রবাসী লোন সুবিধা টিপ গ্রহণ করতে পারবে।
- জরুরি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজন যেমন চিকিৎসা, বিবাহ, এবং অন্যান্য পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্যও প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংক থেকে এই প্রবাসী লোন সেবাটি নিতে পারবে।
- ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য গাড়ি ক্রয়ের জন্য প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংক থেকে এই এই প্রবাসী লোন নিতে পারবে।
এছাড়াও আরো কয়েকটি খাতে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন প্রদান করে থাকে। এ বিষয়ে যদি আপনি আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে জেনে নিতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি নেওয়ার যোগ্যতা
ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোন সেবা টি মূলত প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য দেওয়া হয়েছে। যারা প্রবাসে আছেন এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রয়োজন যেমন বাড়ি কেনা, ব্যবসা সম্প্রসারণ, শিক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য লোন নিতে চান, তারা এই সেবাটি ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রহণ করতে পারেন। ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন কারা পাবে বা এই লোন পেতে কি কি যোগ্যতা লাগবে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
- এই লোনের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বৈধভাবে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারীকে বৈধ উপায়ে আয়ের প্রমাণ দিতে হবে। যেমন, প্রবাসী কর্মীর নিয়মিত ব্যাংকিং লেনদেন, কর্মস্থল থেকে বেতন বা আয় সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকে লেনদেন করার জন্য একটি নিয়মিত ও সক্রিয় ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে।
- প্রবাসী হিসাবে পরিচয়ের প্রমাণ, বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট সহ আয়ের সনদপত্র এবং প্রয়োজন হলে জামানতের জন্য নির্ধারিত সম্পদের দলিল জমা দিতে দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংক সাধারণত জামানতভিত্তিক লোন দিয়ে থাকে। যেমন, প্রবাসী বা পরিবারের কোনো সদস্যের ব্যাংক হিসাবের ডিপোজিট, স্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদি।
সব যোগ্যতা থাকার পরেও আবেদনকারীর দুইজন গ্যারেন্টারের প্রয়োজন পড়বে। আর সেই গ্যারান্টারদের লোনকৃত অর্থ পরিশোধ করার মত সম্পদ থাকতে হবে। অর্থাৎ গ্যারান্টারদের আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়া লাগবে। আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোনের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আপনার নিকটস্থ যে কোন ইসলামী ব্যাংকের শাখায় গিয়ে সরাসরি কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিন।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পরিশোধের সময়
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পরিশোধ করার জন্য গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন পরিশোধের সময়কাল কত হবে তা নির্ভর করে গ্রাহক কত টাকা লোন নিবে তার ওপর নির্ভর করে সাধারণত লোন পরিশোধের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক লোন কোন কাজের উদ্দেশ্যে লোন নিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করেও লোন পরিশোধের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যদি ইসলামী ব্যাংক লোন গ্রহীতার ওপর কম টাকা ইনভেস্ট/বিনিয়োগ বা লোন দিয়ে থাকে তাহলে লোন পরিশোধের সময়কাল কম হবে, আর যদি বিনিয়োগের বা ঋণের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে লোনের সময়সীমা ও বেশি হবে।
তবে সাধারণত ইসলামী ব্যাংক এর লোনের সময়সীমা ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর ইসলামী ব্যাংক লোন এর সময়সীমা গ্রাহকের চাহিদার উপর নির্ভর করে। ইসলামী ব্যাংক লোন পরিশোধের ৩ টি ধরন রয়েছে সেগুলো হল স্বল্প মেয়াদী লোন, মধ্য মেয়াদী লোন এবং দীর্ঘ মেয়াদী লোন। সুতরাং লোন গ্রহীতা লোন পরিশোধের এই তিন ধরনের মধ্য থেকে যে ধরন পছন্দ করে নিবেন তার ওপর নির্ভর করে লোনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রবাসীদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য সহযোগিতা করে থাকে। নিচে ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোনের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
- শরীইয়াহ সম্মত লোন ব্যবস্থাঃ ইসলামী ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক নীতিমালা ও শরিয়া আইন মেনে লোন প্রদান করে থাকে। যাতে কোন প্রকার সুদ বা হারাম আয়ের অংশ না ঢুকে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এই ব্যাংকটি মুরাবাহা, মুদারাবা, ইজারা সহ মুশারাকা লোন প্রদান করে থাকে।
- সহজ কিস্তি পদ্ধতিঃ ইসলামী ব্যাংক এর লোন পরিশোধের জন্য সহজ ও গ্রাহক বান্ধব কিস্তি পদ্ধতি রয়েছে। যার কারণে প্রবাসীরা তাদের উপার্জনের উপর নির্ভর করে সুবিধা জনক সময়ে কিস্তি পরিশোধ করার সুযোগ পায়।
- নিরাপদ ও দ্রুত প্রক্রিয়াঃ প্রবাসীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকটি লোন প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ করে রেখেছে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন পূরণ ও যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে প্রবাসীরা সহজে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে লোন গ্রহন করে থাকেন।
- অর্থ প্রদানের বৈচিত্রময় মাধ্যমঃ ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোন গ্রহণকারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের লোন যেন পরিশোধ করতে পারে তার সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকটি। যেমন, অনলাইন ব্যাংকিং, রেমিডেন্স সেবা বা ব্যাংকের অন্যান্য সেবা কেন্দ্র।
ইসলামী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট
ইসলামী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট একেক ক্ষেত্রে একেক ধরনের হতে পারে। অনেকেই ব্যক্তিগত লোন বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লোন নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে এই লোনের ইন্টারেস্ট রেট বা লভ্যাংশ হবে একরকম। আবার লোন গ্রহীতা যে পরিমাণ লোন নেবে তার ওপর ভিত্তি করে ইন্টারেস্ট রেট বা লভ্যাংশ আলাদা আলাদা হতে পারে।
সাধারণত ইসলামী সুদ গ্রহণ করে না, তারা বিনিয়োগ করে, আর এই বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট পার্সেন্ট লভ্যাংশ নিয়ে থাকে। ইসলামী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট বা লভ্যাংশ ব্যক্তিগত লোনের ক্ষেত্রে ১০% হতে ২০% পর্যন্ত হয়ে থাকে, এবং ব্যবসায়িক লোনের ক্ষেত্রে ১২% হতে ২৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা এই প্রবাসী লোনের জন্য কিভাবে ইসলামী ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। আমরা সকলেই এই বিষয়ে অবগত যে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বিশ্বস্ততা কতটুকু। তাই লোন গ্রহীতাদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের জনপ্রিয়তা অনেক।
আপনারা যারা বিদেশে কর্মরত আছেন অথবা প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন তারা চাইলে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন এর জন্য আবেদন করতে পারেন। ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোনের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন তার প্রসেস গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার নিকটস্থ যেকোনো ইসলামী ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের যেকোনো কর্মচারীর থেকে লোন আবেদন ফরম চাইলেই তারা আপনাকে দিয়ে দিবে।
- এরপরে আপনাকে আবেদন ফরমে চাওয়া সকল তথ্যগুলো সময় নিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- এরপরে এই লোনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র গুলো যেমন, পাসপোর্টের কপি, ভিসার কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, প্রবাস কোম্পানির নিয়োগ পত্র, রেমিড্যান্স সার্টিফিকেট, লাস্ট ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সহ আরো অন্যান্য সকল ডকুমেন্ট গুলো সংগ্রহ করতে হবে।
- এরপরে ফরমের পূরণকৃত তথ্যগুলো এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো আরেকবার ভালো ভাবে দেখে নিতে হবে যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। মনে রাখবেন এই তথ্যগুলো এবং কাগজপত্রগুলো যেন সঠিক হয়। এরপরে ব্যাংকে গিয়ে পূরণকৃত আবেদন ফরম এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র একত্র করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
- এরপরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। লোন আবেদনকারীর আবেদনটি যদি সঠিক এবং লোন আবেদনকারী লোনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন, তাহলে লোন মঞ্জুর করা হবে। এবং লোন আবেদনকারীকে লোন প্রদান করা হবে।
আরেকটি কথা মনে রাখবেন আপনি যাকে নমিনি করবেন তারও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যেমন, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আরো কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। চেষ্টা করবেন সকল তথ্যগুলো যেন ভ্যালিড হয়। আশা করি ইসলামী ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বা এই লোন পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত একটি সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতির সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক সরাসরি লোন বা ঋণ প্রদান করে না। তবে এই ব্যাংক শরীয়াহ অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতিতে গ্রাহকদের বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করে থাকেন। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সুদ নিষিদ্ধ হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকগুলি সুদভিত্তিক লোন না দিয়ে বিভিন্ন বিনিয়োগ ভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে, যা শরীয়াহ সম্মত। নিচে ইসলামী ব্যাংকের কিছু প্রধান বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ইসলামী ব্যাংকের লোনের সুবিধাসমূহঃ
- মুরাবাহাঃ এটি হল একটি বিক্রয় ভিত্তিক চুক্তি। ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কোনো পণ্য কিনে নেয় এবং পরে সেটি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। এখানে ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট লাভ গ্রহণ করে।
- উদাহরণ স্বরূপ যেমন, বাড়ি কেনা, গাড়ি কেনা, ব্যবসার জন্য পণ্য কিনা ইত্যাদি।
- ইজারাঃ এটি হল লিজিং পদ্ধতি। ব্যাংক একটি সম্পদ কিনে সেটি গ্রাহককে ভাড়ায় দেয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গ্রাহক সেই সম্পত্তিটির মালিকানা পেয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ যেমন, যানবাহন বা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
- মুশারাকাঃ এটি হল যৌথ বিনিয়োগ ভিত্তিক চুক্তি। যেটাতে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ই বিনিয়োগ করে থাকে, এবং লাভ ও ক্ষতি উভয়ই পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে ভাগ করে নিয়ে থাকে।
- উদাহরণস্বরূপ যেমন, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব।
- মুদারাবাঃ এই ব্যবস্থাটিতে ব্যাংক মূলধন প্রদান করে থাকে ও গ্রাহক ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে এবং লাভ হলে তা নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করে নেওয়া হয়। কিন্তু যদি ক্ষতি হয় তাহলে শুধুমাত্র ব্যাংক ক্ষতির অংশ বহন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ যেমন, ব্যবসা বা প্রজেক্ট ফান্ডিং।
- সালামঃ এই পদ্ধতিতে গ্রাহক ভবিষ্যতে সরবরাহ করার জন্য একটি পণ্য আগাম অর্থে বিক্রি করে থাকেন এবং পরে আবার ব্যাংককে সেই পণ্যটিকে সরবরাহ করে থাকেন। এই পদ্ধতির সাধারণত কৃষি ও উৎপাদনশীল প্রকল্পে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- ইস্তিসনাঃ এটি মূলত পূর্ব-চুক্তিকৃত ক্রয়-বিক্রয়ের একটি পদ্ধতি, যেখানে ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট পণ্য তৈরি করে দিতে হয় এবং তা পরবর্তী সময়ে গ্রাহক গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নির্মাণ প্রকল্প।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু ছিল ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী লোন ব্যাংক সম্পর্কিত নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে। যা আমরা উপরোক্ত আলোচনায় বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এই লোন সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবামূলক নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। তাই এমনই সব ব্যাংকিং সেবামূলক ইনফরমেশন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url