ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়, সুদের হার, পরিশোধের সময়সীমা

জরুরী লোন বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার উপায়ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়, ব্যাংক লোন কারা পাবে, ব্যাংক লোন সুদের হার ও পরিশোধের সময়সীমা এবং কি কি কাগজপত্র/ডকুমেন্ট লাগে সহ এই লোন পেতে কি জামানত দিতে হয় এই সকল বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল।
ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
তারা যারা ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান। তাদের অবশ্যই ব্যাংক লোনের সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই এই আর্টিকেলে ব্যাংক লোনের সকল খুঁটিনাটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই ব্যাংক লোন সম্পর্কে সকল বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

মানুষ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এই বিপদকালীন সময়ে অনেকেই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সঠিকভাবে ব্যাংক লোন সম্পর্কে না জানার কারণে ব্যাংক লোন আবেদনে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় এবং আবেদন প্রত্যাহার হয়ে যায়। ব্যাংক লোন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে একজন ব্যক্তি খুব সহজেই লোন/ঋণ গ্রহণ করতে পারে।

তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে ব্যাংকের লোন প্রক্রিয়া সহ ব্যাংক লোনের খুঁটিনাটি ও গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়গুলো জানতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ব্যাংক লোন কি

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বা ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার আগে প্রথমে জানতে হবে আসলে ব্যাংক লোন কি। লোন শব্দের অর্থ হলো ধার বা ঋণ। সাধারণত লোন বলতে বোঝায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা ধার নেওয়াকে।


ব্যক্তির মাসিক/বাৎসরিক আয়, সম্পত্তি, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে একটি চুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লোন/ঋণ দিয়ে থাকে। লোনের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর পরিশোধের না করতে পারলে ব্যাংক বা অর্থ দানকারী প্রতিষ্ঠান আইনি ভাবে ব্যক্তির সম্পত্তি সিল বা জব্দ করে নিতে পারবে। আশা করি ব্যাংক লোন কি তা বুঝতে পেরেছেন।

ব্যাংক লোন কত প্রকার ও কি কি

ব্যাংক লোন/ঋণ নেওয়ার আগে আরেকটি বিষয় জানার অত্যন্ত প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে ব্যাংক লোন কত ধরনের হয়ে থাকে এবং সেগুলো কি কি? কারণ এই বিষয়টা জানা থাকলে আপনার কোন লোন/ঋণ নেয়া ভালো হবে সে বিষয়ে জানতে পারবেন। এবং লোন নেওয়াটাও অনেক সহজ হবে। নিচে ব্যাংক লোন কত প্রকার ও কি কি সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

  • চিকিৎসা লোনঃ চিকিৎসা করার জন্য ব্যাংকের লোন কর্মসূচি রয়েছে।
  • ব্যবসায়িক (বিজনেস) লোনঃ ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে যেই লোন দেওয়া হয় তাকে ব্যবসায়িক(বিজনেস) লোন বলে।
  • ব্যক্তিগত (পার্সোনাল) লোনঃ নিজস্ব বা ব্যক্তিগত দরকারে ব্যাংক যেই লোন প্রদান করে সেটিকে ব্যক্তিগত বা পার্সোনাল লোন বলা হয়। অনেকেই এই লোনকে স্যালারি লোন বলে থাকে।
  • হোম লোনঃ বাড়িক্রয় বা বাড়ি তৈরি করতে যেই লোন নেওয়া হয় তাকে হোম লোন বলা হয়।
  • অটো বা গাড়ি লোনঃ গাড়ি ক্রয়ের জন্য ব্যাংক থেকে যে লোন নেওয়া হয় তাকে ফটো বা গাড়ি লোন বলে।
  • শিল্প লোনঃ দেশের শিল্প খাতকে উন্নত করতে ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যাংক শিল্প লোন দিয়ে থাকে।
  • এসএমই লোনঃ ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকে এসএমই লোন কার্যক্রম রয়েছে।
  • স্টুডেন্ট লোন বা এডুকেশন লোনঃ পড়াশুনা করার জন্য ব্যাংক যেই লোন প্রদান করে তাকে স্টুডেন্ট লোন বা এডুকেশন লোন বলে।
  • প্রবাসী লোনঃ দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য যে লোন নেওয়া হয় তাকে প্রবাসী লোন বলা হয়।
  • কৃষি লোনঃ কৃষি কাজে সাহায্যের জন্য কোন যন্ত্রপাতি ক্রয় বা ফসল উৎপাদনের জন্য যেই সার বীজ ও ঔষধ ক্রয় করার জন্য ব্যাংক যেই লোন প্রদান করে তাকে কৃষি লোন বলে।

ব্যাংক লোন এর প্রকারভেদ

ব্যাংক সংস্থা গুলো লোন গ্রহণকারীর উদ্দেশ্যর উপর নির্ভর করে নানা ধরনের লোন বা ঋণের কার্যক্রম করে বা দিয়ে থাকে। ব্যাংক লোন সাধারণত তিন ধরনের বা তিন প্রকারভেদে হয়ে থাকে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

  • ১। স্বল্পমেয়াদী লোন
  • ২। মধ্যমেয়াদী লোন
  • ৩। দীর্ঘমেয়াদী লোন

স্বল্প মেয়াদী লোনঃ যে সকল লোন এর মেয়াদকাল ১ থেকে ২ বছরের কম মেয়াদ থাকে সেই লোনকে স্বল্প মেয়াদী লোন বলে। যেমন, প্রবাসী লোন, কৃষি লোন, এবং ব্যবসা লোন ইত্যাদি। এই লনের মেয়াদ সীমা সীমিত বা কম হওয়ায় এটি আপনি সাপ্তাহিকভাবে পরিশোধ করতে পারবেন।


মধ্যমেয়াদী লোনঃ যে সকল লোনের মেয়াদ সময় ২ থেকে ৫ বছরের হয় সেই লোনকে মধ্য মেয়াদী লোন বলে। অনেক সময় প্রয়োজন অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি লোন এর মধ্যবিত্ত মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। মধ্যমেয়াদী লোন আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ।

দীর্ঘমেয়াদী লোনঃ যে সকল লোনের মেয়াদ ৫ বছরেরও বেশি হয়ে থাকে সেইগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি লোন বলে। দীর্ঘমেয়াদি লোনের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে যেমন: ব্যবসায়িক লোন,ব্যক্তিগত লোন, হাউজ বিল্ডিং লোন, শিক্ষার্থী লোন ইত্যাদি।

ব্যাংক লোনের জন্য সেরা কিছু ব্যাংক

বাংলাদেশে মোট ৬১টি তালিকাভুক্ত ও ৫টি অ- তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে অনেক এনজিও অর্থদানকারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওগুলো লোন প্রদান করে থাকে। লোন গ্রহণের জন্য নিচে সেরা কিছু ব্যাংকের নাম তুলে ধরা হলো।

  • সোনালী ব্যাংক
  • জনতা ব্যাংক
  • প্রাইম ব্যাংক
  • বাংলাদেশ ব্যাংক
  • ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
  • গ্রামীণ ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
  • সিটি ব্যাংক
  • ব্র্যাক ব্যাংক
  • আল আরাফা ব্যাংক
  • এশিয়ান ব্যাংক
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • অগ্রণী ব্যাংক
  • বেসিক ব্যাংক লিমিটেড
  • রুপালী ব্যাংক
  • পূবালী ব্যাংক লিমিটেড
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড
  • ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড
  • আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড
  • বাংলাদেশ ডেভলপয়েন্ট ব্যাংক লিমিটেড

ব্যাংক লোন কারা পাবে

সাধারণত ব্যাংক লোনের জন্য সবাই আবেদন করতে পারে না। ব্যাংক লোন পেতে কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। যেমন চাকরিজীবীদের জন্য সর্বনিম্ন মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা হতে হয়। এবং ব্যবসায়িকদের সর্বনিম্ন মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা হতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান সরকারি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গদের কেউ এই লোন সেবা দিয়ে থাকে।


মূল কথা হলো ব্যাংক লোন নিতে হলে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। নিম্ন আয়ের এবং দরিদ্র সীমার নিচে যে সকল মানুষ অবস্থান করে তাদেরকে এই লোন দেওয়া হয় না।

কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন

বাংলাদেশ প্রায় সব ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে সব ধরনের ব্যাংক সব সুবিধার দিলেও আপনাকে যাচাই করে বেছে নিতে হবে যে কোন ব্যাংক থেকে আপনি লোন নিবেন। যে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট সবচেয়ে কম সেই ব্যাংক থেকে ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ এবং সুবিধা বেশি।

সব ধরনের ব্যাংক সব সুবিধা ভালো নাও হতে পারে। এজন্য আপনাকে যাচাই-বাছাই করে আপনি কি ধরনের লোন নিতে চান তার ধরন অনুসারে আপনাকে ব্যাংক নির্ধারণ করতে হবে।

ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তাবলী

ব্যাংক প্রতিষ্ঠান লোন/ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে। তাদের থেকে লোন/ঋণ গ্রহণ করতে হলে সেই শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। নিচে ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তাবলী গুলো দেওয়া হল।

  • যে উদ্দেশ্যে লোন গ্রহণ করতে চান তার বর্ণনা দিতে হবে।
  • লোন গ্রহণকারীর কাজ বা পেশা, চাকরি অথবা ব্যবসায় কত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।
  • অর্থনৈতিক তথ্য বা ক্রেডিট হিস্ট্রি প্রদান করতে হবে।
  • লোন কৃত অর্থ কোথায় লাগাবেন বা বিনিয়োগ করবেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে।
  • লোন গ্রহণকারীর বা আবেদনকারীর ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দিতে হবে।
  • লোন আবেদনকারীর আয়ের প্রমাণপত্র বা ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট দিতে হবে।
  • অন্য কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থাকলে তার তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • অন্য কোন ব্যাংক থেকে লোন/ঋণ নিয়ে থাকলে তার তথ্য দিতে হবে।
  • লোনের জামানত ব্যক্তিগত অথবা সরকারি গ্যারান্টি দিতে হবে।

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

গ্রাহককে ব্যাংক লোন পেতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের শর্তাবলী ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করলে খুব সহজেই ব্যাংক লোন পাওয়া যায়। ব্যাংক লোন পাবার জন্য বা ব্যাংক লোন এর আবেদনের জন্য যে সমস্ত কাজ করতে হবে সেগুলো আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ক্রমা অনুসারে দেওয়া হয়েছে।


  • প্রথমে গ্রাহক যে প্রতিষ্ঠান বা যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাই সেই ব্যাংক সিলেট করতে হবে।
  • তারপর ব্যাংকের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে লোনের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
  • এরপর আবেদনকৃত ফরমটি বা দরখাস্তটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে।
  • এরপরে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হবে।
  • তারপরে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট/কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।
  • এরপরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবেদন কারীর তথ্য যাচায় এবং ঋণ বিশ্লেষণ করে দেখবেন।
  • তারপর আবেদনটির প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
  • এরপরে আবেদনটির সকল তথ্য সঠিক থাকলে লোন গ্রহণ করা হবে আর না হয় বাতিল করা হবে।
  • লোনের আবেদন গ্রহন করে নিলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শর্তাদি ও জামানত নির্ধারণ করতে হবে।
  • এরপরে লোন চুক্তি প্রস্তুত করা হবে।
  • তারপর লোনের জামানত গ্রহন করা হয় এবং সেটা যাচাই-বাছায় করা হয়।
  • এরপরে প্রস্তুতকৃত চুক্তিনামায় লোন গ্রহণকারী ও ব্যাংকের সহীকরণ করা হয়।
  • তারপর সর্বশেষে পদ্যোক্ত জামানতের ওপর ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
  • দিয়ে লোন আবেদনকারীকে তথা লোন গ্রহীতাকে লোন প্রদান করা হয়।

উপরোক্ত এসকল বিষয়গুলো বা পদক্ষেপগুলো ধাপে ধাপে পরিচালনা করে লোন/ঋণ দেওয়া হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে।

ব্যাংক লোন সুদের হার

বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তাবলী অনুযায়ী বর্তমানে সকল ব্যাংকের লোনের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ %। তবে কিছু ব্যাংক বা অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৭ থেকে ৮% হারে সুদ বা ইন্টারেস্ট নেয়। তবে যদি লোন পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে সুদের হার একটু বেশি হয়ে যেতে পারে যেমন ১০% বা তারও বেশি। এছাড়াও একটা কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন ব্যাংক গুলোর থেকে বিভিন্ন এনজিওর সুদের হার বেশি হয়। ১০ থেকে ১৩ % পর্যন্ত এই এনজিওগুলো সুদ নিয়ে থাকে।

এজন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবেঃ

  • কোন ব্যাংকে সুদের হার কম।
  • কোন ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায় সহজ।
  • কোন ব্যাংকের লোন পরিশোধের ব্যবস্থা সহজ।

ব্যাংক লোন পরিশোধের সময়সীমা

ব্যাংক লোন পরিশোধের সময়সীমা ব্যাংক লোন খাত লোনের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে লোনের সময়সীমাঃ-

  • স্বল্প মেয়াদী লোন ১-২ বছর
  • মধ্যমেয়াদী লোন ২-৫ বছর
  • দীর্ঘমেয়াদী লোন ৫ বছরের বেশি

অনেক সময় লোন পরিশোধের মেয়াদ সীমা ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঋণ বা লোন পরিশোধের মেয়াদ সীমার উপর নির্ভর করে সুদের হার।

সাধারণত

  • স্বল্প মেয়াদী লোনঃ সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে স্বল্প মেয়াদী লোন পরিশোধ করা হয়।
  • মধ্যমেয়াদী লোনঃ মাসিক ত্রৈমাসিক ষান্মাসিক কিস্তিতে মধ্যমেয়াদী লোন পরিশোধ করা হয়।
  • দীর্ঘ মেয়াদী লোনঃ ষান্মাসিক এবং বাৎসরিক কিস্তিতে দীর্ঘমেয়াদি লোন পরিশোধ করা হয়।

ব্যাংক লোন পেতে কি কি কাগজপত্র/ডকুমেন্ট লাগে

ব্যাংক থেকে লোন পেতে কি কি ধরনের কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট লাগে সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চায় বা জানার ইচ্ছা পোষণ করে। তাই সে সকল ব্যক্তির জানার সুবিধার্থে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন নিচে দেওয়া হয়েছে।

  • আবেদনকারী নতুন তোলা ২ থেকে ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ও পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি।
  • ব্যাংকের লাস্ট ছয় মাসের অর্থ লেনদেনের স্টেটমেন্ট দিতে হবে।
  • গ্যাস পানি ও বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি জমা দিতে হবে
  • লোন আবেদনকারীর আয়ের উৎস এবং বিবরণী পত্র জমা দিতে হবে।
  • লোন আবেদনের ফরমে লোন আবেদনকারীর স্বাক্ষর দিতে হবে।
  • লোন পেতে একজন গ্যারান্টার প্রয়োজন এবং সেই গ্যারানটারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ছবি জমা দিতে হবে।
  • বিভিন্ন ধরনের পেশার ক্ষেত্রে ভিজিটিং কার্ড বা আইডি কার্ডের কপি দিতে হবে।
  • যারা ব্যবসা করেন তাদের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • যারা পার্টনারশিপে ব্যবসা করে তাদের ক্ষেত্রে স্মারকলিপি মূলধন ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
  • যাদের খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদেরকে বিএসটিআই সার্টিফিকেট দিতে হবে।
  • অ্যাসিট ও ডিজেলের ব্যবসার যারা নিয়োজিত তাদেরকে ডিসির অনুমোদন পত্র জমা দিতে হবে।
  • মজুদকৃত মাল ও সেই সকল মালের মূল্য তালিকা সহ আর্থিক বিবরণী ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।
  • যারা ঔষধ ব্যবসা করে তাদেরকে ড্রাগ লাইসেন্স দিতে হবে।
  • পে স্লিপ বা স্যালারি সার্টিফিকেট এর কপি দিতে হবে।
  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক চলতি হিসাবের তথ্য দিতে হবে।
  • স্থায়ী সম্পদের হিসাব ও তার মূল্যের তথ্য প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও লিমিটেড কোম্পানিগুলোর জন্য কোম্পানির বর্তমান সেবা গ্রহণকারীদের তালিকা দিতে হবে। যারা পার্টনারশিপের ব্যবসা করে তাদের ক্ষেত্রে (join stock company) থেকে নোটারি পাবলিক এবং রেজিস্টার দ্বারা নোটারাইজড পার্টনারশিপ ডিল দিতে হবে। লোন গ্রহণ / হিসাব খোলার জন্য পার্টনারদের রেগুলেশন জমা দিতে হবে। দোকান / ঘরের ভাড়ার চুক্তিনামা দিতে হবে। পজিশনের দলিল দিতে হবে এবং কর্মচারীদের মাসিক বেতন পদবী এবং তাদের নামের তালিকা দিতে হবে।

ব্যাংক লোন এর বিপরীতে জামানত

জামানত হল ব্যাংক থেকে লোন নিতে লোন গ্রহীতার পদত্ত কোন সম্পত্তি। যদি লোন গ্রহীতা লোন পরিষদ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করে ব্যাংক তার প্রদত্ত অর্থ সংগ্রহ করে। ব্যাংক লোনের বিপরীতে যে সমস্ত জামানত থাকে তা হলোঃ

  • মূল্যবান দ্রব্য, আসবাবপত্র, জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি এবং মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ দলিল পত্র।
  • ব্যাংক একাউন্ট এর সেভিংস সার্টিফিকেট
  • লোন গ্রহীতা লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বা আইনি ব্যবস্থা প্রদে সম্মতি।
  • লোন সাক্ষী বা গ্যারান্টার প্রধানকারী বা জামানত কারীর ব্যক্তিগত গ্যারান্টি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অনেক ব্যাংকে বর্তমানে গ্রাহককে জামানাত ছাড়াই সহজ শর্তে লোন সুবিধা দেয়।

ব্যাংক লোন এর সুবিধা

ব্যাংক লোন এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে সেই সুবিধাগুলো নিতে দেওয়া হল।

  • বিভিন্ন অর্থ লোনদানকারী সংস্থার চেয়ে ব্যাংক লোনের সুদের হার তুলনামূলক অনেক কম হয়।
  • চাপের সময়ে তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়।
  • উদ্যোক্তাদের অর্থের যোগান দিয়ে থাকে।
  • বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে।
  • আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতে ভূমিকা রাখে।
  • জরুরী মুহূর্তে অর্থের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। এছাড়াও আরো নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ব্যাংক লোনে।

ব্যাংক লোন এর অসুবিধা

বিপদকালীন সময়ে ব্যাংক লোন অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে এবং এর সুবিধা ও রয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিচে ব্যাংক লোনের অসুবিধা গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

  • ব্যাংক লোনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির দলিল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
  • যে কেউ চাইলেই এই ব্যাংক লোন গ্রহণ করতে পারে না।
  • ব্যাংক লোন নিতে হলে গ্রাহকের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আই থাকতে হবে। যেমন চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা থাকতে হবে এবং ব্যবসায়িকদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মাসিক আয় থাকতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
  • লোন পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাধ্যতামূলক পরিশোধ করতে হবে। কোন কারণবশত নির্দিষ্ট সময়ের পরিশোধ করতে না পারলে বাড়তি সুদ দিতে হবে। এবং লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে জামানতকৃত সম্পত্ত আইনি প্রক্রিয়ায় সিল করে দেওয়া হয়।
  • এই লোন এর আরেকটি অসুবিধা হলো এটিতে সুদ থাকার ফলে ইসলাম শরীয়ত মোতাবেক এটি হারাম।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি আমাদের আজকের এই ব্যাংক লোন সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এবং ব্যাংক লোনের সম্পূর্ণ প্রসেসটি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনি যদি ব্যাংক লোনের আবেদন করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ঋণ আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হবে।

তারপরেও ব্যাংক লোন/ঋণ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থেকে থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া চেষ্টা করব। আমরা এ ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা মূলক আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। এমনই সব ব্যাংকিং তথ্যমূলক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url