সহজে ১০ হাজার টাকা লোন নেওয়া যায় যে কয়টি উৎস থেকে
ক্ষুদ্র ঋণ কত প্রকার, এর সুবিধা ও ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা১০ হাজার টাকা লোন বা ২০-৩০ হাজার টাকা লোন নেওয়ার অনেক সময় প্রয়োজন পড়ে আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছি তাদের। তাই আমাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চায় যে কোথায় থেকে এই ধরনের অল্প টাকার লোন পাওয়া যায়, কোন প্রসেসে নিতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা এই আর্টিকেলে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তাই আপনি যদি এই ধরনের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করতে চান এবং এই লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের লোন কোথায় থেকে নিবেন, এই লোনের সুবিধা অসুবিধা, শর্তাবলী ইত্যাদি বিষয়ে জানতে পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র
- ভূমিকা
- ১০ হাজার টাকা লোন
- ব্যাংক লোন থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
- মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
- এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
- মাইক্রোফাইন্যান্স লোন থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
- পারিবারিক বা বন্ধুদের কাছ থেকে লোন
- জমি বা গহনা বন্ধক রাখার মাধ্যমের লোন
- পাইপলাইনে লোন
- ১০ হাজার টাকা লোন নেওয়ার শর্তাবলী
- ১০ হাজার টাকার লোনের প্রক্রিয়া বা আবেদন পদ্ধতি
- ১০ হাজার টাকার লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
- ১০ হাজার টাকার লোন পরিশোধের পরিকল্পনা
- লেখকদের মতামত
ভূমিকা
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকেই ছোটখাটো আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য ক্ষুদ্র ঋণের দিকে ঝুকে পড়ছে। ১০ হাজার টাকা একটি ক্ষুদ্র অংক, তবে এটি কোনো জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই আর্টিকেলে, আমরা কীভাবে এবং কোথায় ১০ হাজার টাকা লোন নেওয়া যায়, এই লোনের নেওয়ার শর্তাবলী গুলো কি কি এবং পদ্ধতি গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই পোষ্টের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকুন এবং মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
১০ হাজার টাকা লোন
১০ হাজার টাকা লোন সাধারণত অল্প পরিমাণের একটি লোন, যা একজন মানুষের ব্যক্তিগত কিংবা জরুরি প্রয়োজনে এই লোনটি নিয়ে থাকে। এই ধরনের লোন অর্থাৎ ক্ষুদ্র ঋণ গুলো সাধারণত অল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বা এনজিও সংস্থাগুলো সহজ শর্তাবলী এবং কম কাগজপত্রে লোন মঞ্জুর করে থাকে।
একজন ব্যক্তি সাধারণত তার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা ছোটখাটো ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য এই লোন গ্রহণ করে থাকে। ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান এবং অনলাইন লোন অ্যাপ্লিকেশন থেকে এ ধরনের ঋণ সহজেই নেওয়া যায়। আর এই ধরনের লোনের সুদের হার এবং পরিশোধের সময়সীমা সাধারণত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতার মধ্যকার চুক্তির ওপর নির্ভর করে।
আপনি যদি ১০ হাজার টাকা লোন নিতে চান তাহলে এই ক্ষুদ্র লোন টি নেওয়ার বিভিন্ন উৎস রয়েছে। আপনার পছন্দের যেকোনো একটি উৎস থেকে এই লোন গ্রহণ করতে পারেন। যে সকল উৎস থেকে আপনি এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন সেগুলো কয়েকটি মাধ্যমের নাম নিচে দেওয়া হলঃ
ব্যাংক লোন থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ছোট আকারের ব্যক্তিগত লোন প্রদান করে থাকে। এইসব ক্ষুদ্র লোন সাধারণত একেবারে ছোট আকারের খরচ মেটানোর জন্য গ্রাহকদেরকে দেওয়া হয়। ব্যাংক থেকে এই লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন ক্রেডিট স্কোর, আয়ের উৎস ইত্যাদি। তাই আপনি যদি ব্যাংক ১০ হাজার টাকার লোন বা ক্ষুদ্র লোন গ্রহণ করতে চান, তাহলে ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে বিস্তারিত জেনে লোন গ্রহণ করতে পারেন।
মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
এসব প্ল্যাটফর্ম গুলো থেকে লোন গ্রহণের জন্য সাধারণত আপনার আয়ের কোনো প্রমাণ বা ক্রেডিট স্কোর লাগবে না, তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন এইসব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে লোন গ্রহণ করলে লোনের উপর সুদের হার ব্যাংকের তুলনায় একটু বেশি হবে।
এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
বাংলাদেশে এমন অনেক এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে যারা ছোট লোন/ঋণ প্রদান করে থাকে। এই এনজিও সংস্থা গুলোতে সাধারণত সল্প সুদে লোন পাওয়া যায় এবং তাদের শর্তাবলীও অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে থাকে। তাই আপনার যদি স্বল্প পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় এবং আপনি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে চান। তাহলে আপনি যে কোন এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণ দাতা সংস্থা থেকে লোন নিতে পারেন।
মাইক্রোফাইন্যান্স লোন থেকে ১০ হাজার টাকা লোন
যদি আপনার ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জটিল বা কঠিন মনে হয় তাহলে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিতে পারেন। কেননা তারা ক্ষুদ্র লোম দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সহজ শর্তে লোন প্রদান করে থাকে।
পারিবারিক বা বন্ধুদের কাছ থেকে লোন
যদি আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার কোন ধরনের সুযোগ না পান তাহলে পরিবার বা বন্ধুদের কাছে থেকে লোন চাওয়ার একটা বিকল্প রয়েছে। এতে কোন ধরনের সুদ না নেওয়া হতে পারে তবে সম্পর্ক বজায় রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জমি বা গহনা বন্ধক রাখার মাধ্যমের লোন
কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো কিনা জমি অথবা গহনা বন্ধক রাখার মাধ্যমে লোন দিয়ে থাকে। আপনার কাছে যদি এই সকল জমি কিংবা মূল্যবান কোনো গহনা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি সেগুলো বন্ধক রেখে লোন নিতে পারবেন।
পাইপলাইনে লোন
ছোট অংকের লোনের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান পাইপ লাইনের ব্যবস্থা করে। সাধারণত এটা একটা ফ্রি অ্যাপ্রুভড লোন। যা আপনার ক্রেডিট প্রোফাইলের ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়।
১০ হাজার টাকা লোন নেওয়ার শর্তাবলী
ব্যাংক বা লোনদাতা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বড় ধরনের লোন নিতে গেলে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ফর্মালিটিস, শর্তাবলী ও যোগ্যতার প্রয়োজন হবে। কিন্তু আপনি যদি ব্যাংক, এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করতে চান, তাহলে সহজ কিছু শর্তে এই সব অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লোন নিতে পারবেন।
- আয়ের উৎসঃ ব্যাংক বা ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলি সাধারণত লোণগ্রহীতার আয়ের একটি নির্দিষ্ট উৎস চায়। এই আয় প্রমাণ করা সম্ভব হলে লোণ পাওয়া সহজ হবে আপনার জন্য।
- ক্রেডিট স্কোরঃ ব্যাংক থেকে লোণ নেওয়ার জন্য ক্রেডিট স্কোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো হয়ে থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজে এবং কম সুদে লোণ পেয়ে যাবেন। তবে মোবাইল ব্যাংকিং বা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বা এটার প্রয়োজন হয় না।
- সুদের হারঃ ১০ হাজার টাকার লোনের উপর সুদের হার ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম এবং এনজিওর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলি ব্যাংকের তুলনায় বেশি সুদ নিয়ে থাকে।
১০ হাজার টাকার লোনের প্রক্রিয়া বা আবেদন পদ্ধতি
- ব্যাংক লোনঃ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। এর সাথে আয়ের প্রমাণপত্র এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে।
- মোবাইল ব্যাংকিং লোনঃ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে লোনের আবেদন করতে পারবেন। এখানে কোনো কাগজপত্রের ঝামেলা নেই।
- এনজিও লোনঃ আপনি যদি এনজিও থেকে লোন গ্রহন করতে চান। তাহলে আপনাকে এনজিওতে আবেদন করতে হলে এনজিওর স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখানে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসা বা আয়ের প্রমাণ জমা দিতে হয়।
তবে একটা কথায় মাথা রাখবেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের লোন নেওয়ার আগে সেই লোনের শর্তাবলী গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এছাড়াও লোন পরিশোধের সময়কাল, লোনের সুদের হার, এবং লোনের অন্যান্য ফি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোন প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নেওয়ার পূর্বে এ সকল বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন এবং তা ভালোভাবে জেনে নিবেন ও বিচার বিশ্লেষণ করবেন।
১০ হাজার টাকার লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
এই ধরনের লোনের সুবিধাঃ
- জরুরি প্রয়োজন মেটানোঃ ১০ হাজার টাকা হলো একটি ছোট পরিমাণ অর্থ, কিন্তু অনেক সময় এই অল্প টাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে পারে।
- সহজলভ্যতাঃ অল্প টাকার ঋণ বা ক্ষুদ্রঋণ মোবাইল ব্যাংকিং এবং এনজিও থেকে খুব সহজেই ও দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাওয়া যায়।
- নিম্ন আয় সম্পন্ন ব্যক্তিদের সহায়তাঃ ছোট আয়ের ব্যক্তি বা যারা নিম্ন আয়ের ব্যক্তি তাদের জন্য এই ধরনের লোন একটি বড় সাহায্য হতে পারে।
এই ধরনের লোনের অসুবিধাঃ
- সুদের হার বেশিঃ মোবাইল ব্যাংকিং এবং এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বড় অসুবিধা হল, তাদের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
- সংক্ষিপ্ত সময়ের লোনঃ এসব লোন সাধারণত স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
১০ হাজার টাকার লোন পরিশোধের পরিকল্পনা
- সময়মতো পরিশোধঃ আপনি যদি সঠিক সময়ে লোন পরিশোধ না করেন, তাহলে লোনদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার উপর অতিরিক্ত জরিমানা বা সুদ চাপাতে পারে। তাই সব সময় সময়মতো লোন পরিশোধ করা করবেন।
- অতিরিক্ত লোন গ্রহণ থেকে বিরত থাকাঃ কোন ব্যক্তি যদি একাধিক লোন গ্রহণ করে তাহলে একাধিক লোন নেওয়ার ফলে আর্থিকভাবে চাপে পড়ার চান্স অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত লোন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
লেখকের মতামত
১০ হাজার টাকা লোন নেওয়া একটি সহজ সমাধান হলেও এর শর্তাবলী এবং সুদের হার সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই লোন নেওয়ার পূর্বে আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের শর্তাবলী, সুদের হার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। আপনার সঠিক পরিকল্পনা এবং এই লোনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ লোন আপনার আর্থিক সমস্যা সমাধান করতে পারে।
আর ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল পরিকল্পনা হলে এই লোন আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই আর্টিকেলটি করে যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন এসে থেকে থাকে, তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এবং এমনই নিত্যনতুন তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url