প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত - শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা - দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিতপ্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত, শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় ও রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় সহ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আজকের এই পোস্ট।
আপনারা যারা জানতে চাচ্ছেন কিসমিস কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন, এটি খেলে কি হয়, ভেজা কিসমিসের পানি খেলে কি হয় ইত্যাদি কিসমিস খাওয়ার এর উপকারি গুণাগুণ নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আর্টিকেল। এই সমস্ত বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র
- ভূমিকা
- প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
- রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
- প্রতিদিন কিশমিশ খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়
- শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
- কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কি হয়
- অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়
- কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
- কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
- লেখকের মতামত
ভূমিকা
কিসমিস অত্যন্ত একটি উপকারী উপাদান যা মানব দেহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। অনেকেই আছেন যারা কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও এই কিসমিস খেলে কি কি উপকারে আসে তা জানতে চান। তাদের জন্য এই আর্টিকেলে কিসমিস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ সকল বিষয়গুলো জানতে পোষ্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ুন।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কিসমিস খাওয়া মানুষের জন্য খুবই উপকারী কিন্তু অনেকেই জানে না কতটুকু কিশমিশ খাওয়া প্রয়োজন। কিশমি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খুবই সুস্বাদু একটি খাদ্য। সে মাই পোলাও পায়ে সিতাদের সাথে আমরা কিসমিস ব্যবহার করে থাকি। কিশমিশ মিশালে এইসব খাবারের স্বাদ আরো বেশি বেড়ে যায়।
আমাদের শরীর ভালো রাখতে প্রতিদিন খালি পেটে ভেজা কিসমিস খাওয়া উচিত। তাতে আমাদের শরীর ভালো থাকে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে শরীর দুর্বলতা দূর করে এবং দেহের জন্য অনেক উপকারী। কিশমিশে অনেক উপস্থিতি উপাদান থাকে যেমন আয়রন, ভিটামিন বি ৬, পটাশিয়াম, ফাইবার, কপার, প্রোটিন ইত্যাদি। রাতে ভিজে রাখার পর সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়া উত্তম। তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া ভালো নয়। বেশি পরিমাণে কিসমিস খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য পুষ্টির শোষণ কমিয়ে গায়েটারি ফাইবার আমাদের শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত তরল শুষে নিতে পারে। প্রতিদিন ১/৪ কাপ (৪০- ৫০ টি) /৪০ গ্রাম কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটা প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ক্যালরি গ্রহণেও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
কিসমিসে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকেঃ-
- পটাশিয়ামঃ ২৩৫ মিলিগ্রাম
- আইরনঃ ১.৩মিলিগ্রাম
- ফাইবারঃ ৩ গ্রাম
- ভিটামিনঃ ০.১ মিলিগ্রাম
- ক্যালোরিঃ ১২০
- ম্যাঙ্গানিজঃ ০.৩ মিলিগ্রাম
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়া মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। সকলের উচিত প্রতিদিন খাদ্যের সাথে কিসমিস খাওয়া। কারণ শরীরে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে কিসমিস। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন 40 থেকে 50 গ্রাম করে কিসমিস খাওয়া। কিসমিস যে শুধু রান্নার কাজে লাগে তা নয় এটা খালি পেটে ভেজে খাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই কিসমিস ঘুমানোর আগে খেলে কি হয় এই সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- হাড়কে সুস্থ রাখেঃ কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা হারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- অনিদ্রা দূর করেঃ রাতে ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ৬ কিসমিস খাবার ফলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ কিসমিস ঘুমানোর আগে খেলে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- মানসিক সমস্যা দূর হয়ঃ কিশমিশে থাকে বরণ যা মানসিক সমস্যা দূর করতে কাজে আসে।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে কিসমিসের গুরুত্ব অপরিসীম।
- ওজন বৃদ্ধি করেঃ কিসমিসে থাকে ফাইবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- দাঁতের যত্নেঃ কিসমিস খেলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয় এবং দাঁতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- পাকস্থলীর অম্লত্ব দূর করেঃ কিশমিশ খাওয়ার ফলে এসিডিটির সমস্যা দূর করে এবং পাকস্থলীর অম্লত্ব দূর করে থাকে।
- অতিরিক্ত ওজন কমাতেঃ রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেঃ কিসমিসে থাকাই এ অক্সিজেন যা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতেঃ কিসমিস খাওয়ার ফলে ক্যান্সার আক্রমণ করতে পারে না এবং শরীরে ফ্রী রেডিক্যাল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কিশমিশে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা রাতে ঘুমানোর আগে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
প্রতিদিন কিশমিশ খেলে কি হয়
কিশমিশে আছে পুষ্টি গুন যার শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিশমিশে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পলিফেনলস, এবং অন্যান্য আরও ফাইবার থাকে যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিসমিসের কিছু উপকার নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
- সুস্থ ভাবে ওজন বাড়ায়ঃ যারা মোটা তারা ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকে আবার অনেকে আছে যারা ওজন বাড়াতে চায় তাদের জন্য সুখবর হলো কিসমিস খাওয়ার ফলে ওজন কমাতে ও বাড়াতে পারবেন।
- ঘুম ভালো হয়ঃ প্রতিটা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন আছে না হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া ঝুঁকি থাকে। কিসমিসে রয়েছে আয়রনের মত খনিজ পদার্থ যা পর্যাপ্ত ঘুম হতে সাহায্য করে। ঘুমের জন্য কিসমিসের গুরুত্ব অনেক। কিশমিশ খাওয়ার ফলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদক বৃদ্ধি করে এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে। তাছাড়া শরীর ও মন মেজাজ শান্ত রাখতেও সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কিশমিশে আছে প্রচুর ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে থাকে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধঃ প্রতিদিনের খাবার মেনুতে কিসমিস রাখার দরকার রয়েছে কারণ কিসমিসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য বর্ধনঃ কিশমিশে থাকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম প্রোটিন খনিজ পদার্থ ভিটামিন ইত্যাদি যা হার ও দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। কিশমি সঠিকভাবে হার গঠনের সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম কে তাড়াতাড়ি শুষে নিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট শরীরের জন্য অল্প পরিমাণের প্রয়োজন হয় তবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ উপস্থিত পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ার কারণ হলো সোডিয়াম কিস মি শরীরের সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন খনিজ পদার্থ পলিফেনলস ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য ফাইবার যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়াতে সাহায্য করে। এবং আমাদের ইমিউন সিস্টেম গঠন করে থাকে।
তাছাড়া প্রতিনিয়ত আমাদের সিস্টেম ফ্রি রেডিক্যাল গুলোর সাথে লড়াই করে থাকে। শ্বেত রক্তকণিকা ও কোষ গুলোকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির কারণ হতে রোধ করে। সেজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে কিসমিস খাবার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে আমাদের শরীরের রোগ গুলো বাসা বাঁধতে পারবে না।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। একটা মায়ের গর্ভাবস্থায় ভ্রুোনের সঠিক বিকাশ তার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। এক গবেষণায় জানা যায় নিয়মিত কিসমিস খেলে মস্তিষ্কের কার্যকরিতা এবং মস্তিষ্কের সচল রাখে। এজন্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাসে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই কিসমিস উপাদান যার শিশু ও মায়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
- দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন। কিসমিসে রয়েছে অনিয়ানলিক এসিড এবং ক্যালসিয়াম যা দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কিসমিসে আছে ল্যাক্সেটভ এবং ফাইবার উপাদান যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক বেশি বুঝে থাকেন। কিসমিস খুব তাড়াতাড়ি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ওজন বৃদ্ধি করেঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভবতী মায়ের অনাগত বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করতে অনেক সহায়তা করে।
- শরীরে শক্তি যোগায়ঃ কিসমিস হলো প্রাকৃতিক গ্লুকোজের একটি ভালো উৎস।গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত কিসমিস খেলে গর্ভাবস্থায় শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি যোগায় এবং শক্তিশালী করে।
- পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করেঃ কিসমিসের মধ্যে ফাইবার উপাদান আছে যা শরীরের পাতন ক্রিয়াকে করে তুলবে শক্তিশালী। এজন্য গর্ভাবস্থায় পাচনতন্ত্রকে সুস্থ এবং ভালো রাখতে কিসমির বেশি পরিমাণে খান।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসের মধ্যে যেই পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেই উপাদানটি গর্ভবতী মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
- এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তিঃ আয়রনের একটি ভালো উৎস হলো কিসমিস গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের ঘাটতি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। যার ফলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া সমস্যা হতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে কিসমিস খেতে পারেন।
- হাড় মজবুত করেঃ হার দুর্বল হলে সেই দুর্বল হার শক্তিশালী করে তোলে কিসমিস। কেননা কিশমিশে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হারকে মজবুত করে হাড়ের ঘনত্ব বজায় রেখে হাড়কের শক্তিশালী করে তোলে। গর্ভাবস্থায় হারকে মজবুত রাখতে প্রতিদিন খাবার তালিকায় কিসমিস রাখতে পারেন।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কিশমিশে রয়েছে ফাইবার উপাদান যা নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বাড়ায় ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন এবং খনিজঃ কিশমিশে আছে ভিটামিন, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি 6 যা শিশু এবং মায়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।
- অনিদ্রা দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যেটা আমাদের অনিদ্রা দূর করতে সক্ষম।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষগুলো কে সুরক্ষা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এবং এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে কিসমিসে। যা আমাদের দেহের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে হার্টকে ভালো এবং সুস্থ রাখে।
- শিশুর মস্তিষ্কের গঠনেঃ কিসমিসে রয়েছে মাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ একটি উপাদান যা দেহের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। এবং এটি শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অপরিহার্য।
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়
কিসমিস একটি সুন্নতি ফল এটি যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটি ত্বকের মৃদু কোষ গুলোকে দূর করে এবং সেই সাথে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। আমরা প্রায় সকলে জানি যে শুকনো ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো।
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কিসমিস সৌন্দর্যের ও বেশ উপকারিতা রয়েছে। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, এবং পটাশিয়ামের মত সকল পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের ত্বক ও চুলের পুষ্টির জন্য সহায়ক।
কিসমিস সেদ্ধ করলে বা ভিজে রাখলে কিসমিসের পুষ্টি উপাদান সব পানির সাথে মিশে যায়। এজন্য কিসমিস খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পানি খাওয়া আমাদের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক প্রয়োজনীয়। কিসমিস চুল লম্বা করে যদি আপনার চুল লম্বা না হয় তাহলে কোন চিন্তা করবেন না কেননা কিসমিস আপনার চুলকে খুব দ্রুত লম্বা করে দিবে।
এছাড়াও কিসমিস আমাদের ত্বক মশ্চারাইজার করে এবং চুল পড়া রোধ করে।কিসমিস ভেজানো পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের এখন থেকে কিসমিস এবং কিসমিসের পানি খাওয়া শুরু করা উচিত।
প্রতিদিন কিশমিশের পানি খেলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। এছাড়াও কিসমিস পানিতে যেই ভিটামিন সি রয়েছে সেটি আপনার ত্বকের কালো ভাব দূর করবে। শরীর এবং ত্বক উজ্জ্বল ও ভালো রাখতে আমাদের সকলেরই উচিত প্রতিদিন কিসমিস এবং কিসমিস ভেজানো পানি পান করা।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় এর বর্ণনা গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ-
- কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি বাড়াতে এবং পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া খুব দ্রুত হতে ত্বরান্বিত করে।
- অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে শুকনো কিসমিসে ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী কোলে তোলে।
- তাছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বোরন আছে কিসমিসে যেগুলি অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধ করে।
- পটাশিয়াম রয়েছে কিসমিসে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- চোখের যত্নে কিশমিশের গুরুত্ব ভূমিকা অনেক। কিসমিসর রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দৃষ্টিশক্তি এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা দূর করে।
- এছাড়াও যদি কেউ চোখে কম দেখে বা ঝাপসা দেখে তাহলে কিসমিস খেলে তা দ্রুত ভালো হয়।
- যদি মানব দেহে অধিক পরিমাণ টক্সিক পদার্থ থকে তাহলে দেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় কিসমিস খেলে রক্তের টক্সিক পদার্থ ধ্বংস করে।
- ঘা কাটা ছেঁড়া সাড়াতে পারে কিসমিস কেননা কিশমিশে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ান পলিফেনলেন্স উপাদান।
- যদি কেউ শরীলের ওজন বাড়াতে চান সেক্ষেত্রে কিসমিস খেতে পারেন। কারণ কিসমিসে গ্লুকোজ এবং ফ্রুকোজ উপস্থিত যা শরীরের হেলদি ভাবে ওজন বৃদ্ধি করে।
- কিসমিসে রয়েছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম জা দাঁতের যেকোনো সমস্যা দূর করে এবং দাঁতকে মজবুত করে।
- যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভুগেছেন তারা ঘুমানোর আগে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কেননা কিসমিস খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়।
- কিসমিসে রয়েছে লোহা এবং আয়রন উপাদান যেটা রক্তস্বল্পতা ও রক্তের অ্যানিমিয়া দূর করে।
- কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টি কলেস্টেরল উপাদান যেটা কিনা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমাতে সক্ষম।
কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কি হয়
আমরা প্রায় সবাই জানি যে কিসমিস কতটা উপকারী এটি দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে দূর করে। কিসমিসে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। কেউ যদি কিসমিস না খেতে চান তাহলে কিসমিস ভেজানো পানি খেতে পারেন। কেননা কিসমিস পানিতে ভিজে রাখলে তার উপকারিতা সব পানিতে প্রবেশ করে।
কিসমিসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি।যেটা আপনার ত্বক এবং চুলকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এবং শরীর শক্তিশালী করে তোলে। এবার আপনাদের জানাবো কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো এবং সহজ উপায় সম্পর্কে।
এক মুঠো কিশমিশ পানিতে সারা রাতের জন্য ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেই পানি পান করুন কেননা কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তার পুষ্টিগুন সব পানিতে প্রবেশ করে। সেই পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার ঝুকি কমায়ঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো কিসমিস। কেননা এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তস্বল্পতা কমায়ঃ রক্তস্বল্পতা কমাতে কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। কিসমিসে উপস্থিত আয়রন যেটা রক্তিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে লাল রক্ত কণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে।
- হজম শক্তি বাড়ায়ঃ সুস্থ থাকতে ভালো হজম শক্তি অত্যন্ত প্রয়োজন কিসমিস হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ যদি আপনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান সেক্ষেত্রে কিসমিস ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
- বিষমুক্ত শরীরঃ শরীরকে দূষণ এবং বিষমুক্ত করতে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে কিশমি ভেজানো পানি খেলে শরীর হবে দূষণ এবং বিষমুক্ত।
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়ঃ নিয়মিত কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যদি আপনি পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে ঔষধের বদলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি পান করুন তাহলে খুব দ্রুতই সুফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।
অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়
মিষ্টি খাবারে দেওয়ার প্রধান উপাদান হলো কিসমিস। এটি পোলাও পায়েস হালুয়া এবং সেমাইয়ে ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। কিসমিসে রয়েছে অধিক পরিমাণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। যাদের হার দুর্বল তাদের হারকে মজবুত করে তুলবে কিসমিস। এবং যাদের শরীর শক্তি কম তাদেরও শক্তিশালী করে তুলবে।
কিসমিসে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন, মিনারেল, কপার ইত্যাদি পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত।সেক্ষেত্রে এটা শরীরের জন্য উপকারিতা ও ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর বেশি পরিমাণ খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়।
- ত্বকের এলার্জিঃ এক এক ব্যক্তির একেক খাবারে অ্যালার্জি থাকতে পারে। প্রথমবার কিসমিস খাওয়ার সময় খেয়াল করুন যে কিসমিস খেলে আপনার ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি হয় কিনা। যদি হয় তাহলে কিসমিস খাবার থেকে এড়িয়ে চলুন।
- ওজন বৃদ্ধিঃ উচ্চমাত্রার ক্যালরি রয়েছে কিসমিসে। যদি আপনি ওজন বাড়াতে চান তাহলে কিসমিস খেতে পারেন। আর যদি কমাতে চান তাহলে এটি না খাওয়াই ভাল।
- রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিঃ কিসমিসে অধিক পরিমাণ ক্যালরি ও চিনি থাকে। এটি অল্প খেলে উপকার হবে বেশি খেলে ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ কিসমিস খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিসমিস একটি উপকারী খাবার তবে এটি পরিমাণ মতো খেতে হবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
একটা পাত্রে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপরে ১ গ্লাস পানিতে ধুয়ে রাখা কিসমিস গুলো দিয়ে সারা রাতের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিসমিস এবং সেই ভিজিয়ে রাখা পানি পান করুন। কিসমিস খাওয়া এক ঘন্টা পর যে কোন খাবার খাবেন। এভাবে নিয়মিত খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
সকালে প্রতিদিন খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খেলে নতুন রক্তের কণিকা দূর হবে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে এটি দেহের আয়রন ও হিমোগ্লেমের মাথা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যারা এসিডিটির বা গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন প্রতিদিন তারা খালি পেটে সকালে এই ভেজানো কিসমিস খেতে পারেন এটাই সুফল পাবেন।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
রান্নায় বা যে কোন মিষ্টি খাবারে কিসমিস ব্যবহার করলে স্বাদ আরো বেশি বেড়ে যায়। অনেকে আছেন যারা কিসমিস এমনিতেও খেয়ে থাকেন। কেননা কিসমিসের উপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে রান্নায় না দিয়ে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- হজম শক্তি বাড়ায়ঃ ভিজে রাখা কিসমিসে অধিক পরিমাণ ফাইবার থাকে যেটা হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে আর হজমশক্তি ঠিক থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও দূর হয়।
- আয়রন সমৃদ্ধঃ কিসমিসে উপস্থিত আয়রন যার রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া কমাতে সক্ষম।
- হৃদরোগের জন্য উপকারীঃ ভেজানো কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং এটি হৃদপিন্ডের জন্য অনেক উপকারী।
- হাড়ে পুষ্টি যোগায়ঃ কিসমিসে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা হাড়কে মজবুত এবং শক্তিশালী করে তোলে। কিসমিস খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও পূরণ হয়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কিসমিস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেঃ কিসমিস আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমাতে এবং দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- ত্বকে পুষ্টি যোগায়ঃ কিসমিসে উপস্থিত পুষ্টি ভিটামিন এবং মিনারেল যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত কিসমিস খেলে ত্বকের কালো ভাব দূর হয় এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু ছিল কিসমিস খাবার নানান উপকারী গুনাগুন নিয়ে এর সঙ্গে কিসমিস খেলে কি হয়, কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এমনই সব স্বাস্থ্য বিষয়ক ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url