গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন জানুন বিস্তারিত

প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর মাসিক বন্ধ হয়গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন এবং তলপেটে ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ সহ গর্ভাবস্থায় পেটের নানা ধরনের সমস্যার লক্ষণগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই আর্টিকেল।
গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন
তাই আপনারা যারা গর্ভাবস্থায় পেটের ব্যথা সহ পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন এবং সেগুলোর কারণ জানার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। কারণ এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় তলপেটের বা পেটের কি কি সমস্যা হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় নারীদের পেটে ব্যথা সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলো হবার কারণ কি বা তলপেট ব্যথা হবার কারণ গুলো কি কি তা জানা সকল মায়েদেরই প্রয়োজন। তাই এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়টি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তলপেট ব্যথা হবার কারণ ও ভারী ও চুলকানোর কারণ গুলো জানতে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন

কোন মেয়ে যখন গর্ভবতী হয় তখন তার শরীরে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। শারীরিক পরিবর্তনগুলো তার কাছে তখন নতুন এবং কষ্টকর হয়। গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মাকে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। যদি গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সঠিক তথ্য জেনে তারপরে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
এমন অনেক গর্ভবতী মহিলা আছে যাদের গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা করে। কিন্তু এই ব্যথা হওয়ার সঠিক কারণটা আমরা অনেকেই জানি না তাই আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় তলপেটে কেন ব্যথা হয়।

গর্ভবতী মেয়েদের শরীরে পরিবর্তন শুরু হয় ১৮ থেকে ২৩ সপ্তাহের মধ্যে এবং শরীরে ইউটেরাসের হাড়ের প্রশারন ঘটতে থাকে। এই ইউটেরাসের প্রসারণ ঘটার ফলে তলপেটে ব্যথা হয়। এই ব্যথা পেটের দুই দিকে হতে দেখা যায় আবার স্থান পরিবর্তন করে ডান দিক বা বাম দিকে ও হতে পারে। ভ্রনের বৃদ্ধির সাথে সাথে ইউটেরাসের হাড় গুলোর প্রসারণ ঘটতে থাকে।যার ফলে দ্বিতীয় মাসে বা তৃতীয় মাসেও এই ব্যথা হতে পারে।

হাড়ের এই প্রসারণ এর ফলে ইউটেরাসের স্থির হতে সাহায্য করে এবং আস্তে আস্তে ভ্রনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে থাকে।এই সকল পরিবর্তনের কারণেই তলপেটে ব্যথা হতে পারে। ভ্রম বৃদ্ধি তোর সাথে সাথে ইউটেরাসের হাড় গুলো প্রসারিত হতে থাকবে যার কারনে এই ব্যথা মাঝেমধ্যে অনুভূতি হতে পারে।

এই ব্যথা কিছু সময়ের জন্য হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভবতী মেয়েদের গর্ভাবস্থায় যদি অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে তা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখাতে হবে। আশা করি গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মেয়েদের ব্যথার কারণ গুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

তলপেটে ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

তলপেটে ব্যথা প্রেগনেন্সির লক্ষণ কি না তা নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। একজন মেয়ে চেক করে খুব সহজে বুঝতে পারে সে গর্ভবতী কিনা।
প্রেগনেন্সির প্রধান লক্ষণ হল মাজা ও তলপেট ব্যথা। তবে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকে। সেগুলো আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে দেওয়া হল।

  • এপেন্ডিসাইটিসঃ এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হলে ডান পাশে পেট এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
  • মূত্রথলির প্রদাহঃ প্রসাবের সময় যে জ্বালাপোড়া হয় এবং তলপেটে ব্যথা হয় তাকে মূত্রথলির প্রদাহ বলে। যার কারণে তলপেট ব্যথা হতে পারে।
  • হজম শক্তিঃ কোন খাবার খাওয়ার পর যদি সেই খাবার হজম না হয় তাহলে এই পেট ব্যথা হতে পারে। হজম না হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় গ্যাসের সমস্যা বমি হতে পারে। পেট গুড় মুড়ি ও ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। হজম শক্তি খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খাবার হজম না হলে তলপেট ব্যথা হয়।

গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেট ব্যাথা

গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেটব্যথা হয় এতে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। কারণ এই ব্যথাটা স্বাভাবিক ব্যথা তারপরও গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে পেটে কেন ব্যথা হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। এই ব্যাথা সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত। গর্ভকালীন সময় প্রথম মাসের ব্যথা হলে আমরা অনেক ভয় পেয়ে যায়। গর্ভবতী মেয়েদের শরীরে পরিবর্তন আসে সেই কারণে প্রথম মাসে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথাটা স্বাভাবিক তাই চিন্তার কোন বিষয় নেই।
এই পরিবর্তনের মধ্যে হল পেট আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায় পেট বড় হওয়ার কারণে শরীরের ইউটেরাসের হাড়ের প্রশাসন ঘটতে থাকে। এই হারের প্রসারন হওয়ার জন্য তলপেটে ভ্রনের স্থায়িত্ব গঠন হতে থাকে। ইউটেরাসের এইসব হাড় গুলোর ভ্রনকে ধরে রাখতে পারে। সেই কারণে গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের তলপেটে ব্যথা করতে পারে।

এই ব্যথা কোন অস্বাভাবিক ব্যথা নয় তাই পরত্ব যদি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা হতে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন গর্ব অবস্থায় কি কারনে প্রথম মাসে ব্যথা হয়।

গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন

জরায়ু সংকোচন এর কারণে গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হতে পারে। এই সংকোচন গুলি প্রসবের সময় যে ব্যথা অনুভব হয় তার চেয়ে আলাদা হয়। কারণ এই সংকোচনটি ব্যথা হীন হয়। শিশুর জন্য জরায়ু প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে কিছু সংকোচন এর সৃষ্টি হয় যার কারণে পেট শক্ত হওয়ার অনুভূতি হয়। এই সংকোচন গুলো প্রসাবের জলবায়ু প্রস্তুত এর কাজ করতে থাকে।
গর্ভাবস্থায় প্রসারিত কাজ করে বৃত্তাকার লিগামেন্ট এবং ওকে সমর্থন করে থাকে। লিগামেন্ট গুলি চাপা পড়ে যায় সেই কারণে অস্বস্তি কর তার সৃষ্টি হয়। বাক্স টন হিকস সংকোচন শক্ত হওয়ার আরেকটি কারণ আছে। এই সংকোচন গুলো প্রায় সময় ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে যার কারণে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।

শিশুর বৃদ্ধি হতে থাকলে ভ্রনের নড়াচড়া করে এবং লাথিতে কখনো কখনো পেট ব্যথা হয়। এটা শিশুর বিকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম এতে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। গর্ভকালীন সময়ে হরমোন গুলোর পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে থাকে তখন মলত্যাগ ও গ্যাসের পরিবর্তন হতে পারে গ্যাস থেকে পেট শক্ত হতে পারে। এই আলোচনা থেকে আপনারা বুঝে যাবেন গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথার কারণ।

কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়

যে মেয়েগুলো প্রথমবার প্রেগনেন্সি কনসিভ করেন তাদের অবশ্যই জানা দরকার কনসিভ করলে পেট ব্যথার কারণ।সাধারণত পিরিওড হলে অনেকের পেট ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু কনসিভ করলেও কি পেট ব্যথা হয়? সেই সম্পর্কে আমাদের জানা নেই তাই এই দুই ধরনের ব্যথার পার্থক্য কেমন হয় তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা।
যখন একজন মেয়ে কনসিভ করে তখন তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয় কিন্তু কিছু পরিবর্তন অনেক কষ্টদায়ক হয়। কনসিভ করলে সাধারণত বাম এবং ডান দিকে ব্যথা হতে পারে। তাছাড়াও এই সময়ে ইউটেরাসের বৃদ্ধির ফলে তলপেট ব্যথা হয়। প্রথমবার কনসিভ করার ফলে ব্যথা হতে পারে।যেহেতু এই ব্যাথা স্বাভাবিক তাই ভয় পাবার কোন কারণ নেই।

গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী লাগে কেন

গর্ভাবস্থায় তলপেট ভারী হওয়ার কারণ গুলো নিচে দেওয়া হলো।

  • প্রসারিত জরায়ুঃ জরায়ু প্রসারিত হওয়ার কারণে গর্ভকালীন সময়ে পেট ভারী হয়। শিশুর বৃদ্ধির মাধ্যমেও জরায়ু পরিবর্তন হয় এবং বিকাশ মান ভ্রনকে প্রসারিত করে থাকে। এবং সামগ্রস্য বজায় রাখে। অঙ্গ পেশীগুলোর উপর চাপ পড়ার ফলে তলপেটে ওজন বেড়ে যায়।
  • তরল ধারণঃ শিশুর প্রয়োজনীয় রক্তের পরিমাণ ধরে রাখার জন্য গর্ভাবস্থায় শরীরে তরল ধারণ বজায় রাখতে হয়। এই তরল ধরে রাখতে গিয়ে শরীর ফুলে যায়, যার কারণে তলপেট ভারী হয়।
  • শিশুর অতিরিক্ত ওজনঃ শিশুর অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে গর্ভবতী মায়ের তলপেট ভারী হয়ে যায়।
  • পেশী এবং লিগামেন্ট স্টেচিংঃ পেশী এবং লিগামেন্ট স্ট্রেচিং এর ফলে শরীরে প্রসবের প্রস্তুত করে থাকে। এবং অঞ্চলের পেশি লিগামেন্ট গুলি শিশুর বৃদ্ধির কাজে প্রসারিত হয়। এর ফলে তলপেটে চাপ পড়ে এবং তলপেট ভারী হয়।
  • রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিঃ রক্ত প্রবাহ গর্ভাবস্থায় ভ্রুনকে সমর্থন করে।পেলভিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটতে সাহায্য করে। এবং চাপের অনুভূতি সৃষ্টি করে যা তলপেটের ওজন বাড়িয়ে ভারী করে।

গর্ভাবস্থায় পেট চুলকায় কেন

গর্ভাবস্থায় পেট চুলকানোর চারটি কারণ নিচে আলোচনা করা হলো।

  • ত্বক টানটান হওয়াঃ শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বক টানটান হয়ে যায়। পাকস্থলীর ত্বক খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ত্বকের কোলাজেল ফাইবারগুলো ভাঙতে থাকে। যার ফলে গর্ভকালীন সময় পেট চুলকাতে থাকে।
  • হরমোনের পরিবর্তনঃ গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে যেমন ত্বকের আদ্রতা ভারসাম্যকে ভাবিত করে যেই কারণে গর্ভকালীন সময়ে শুরুতে চুলকানি হয়।
  • এলার্জি প্রতিক্রিয়াঃ অনেক গর্ভবতী মেয়েদের অ্যালার্জি থাকে যার ফলে পেট বা শরীরে অন্য কোন অংশ চুলকায়।
  • লিভারের অবস্থাঃ গর্ভকালীন সময়ে লিভারের চুলকানি হতে পারে যা প্রসবের বাধা সৃষ্টি করে। এই বোধিপৃত্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করতে পারে। অনেক সময় চুলকানি মারাত্মক আকারে ধারণ করে। বিশেষ করে হাতে পায়ে ও অন্যান্য অঙ্গে চুলকানি দেখা দিতে পারে। চুলকানি মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে চুলকালে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠকগন আমরা আজকের এই পোস্টে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি গর্ভাবস্থায় তলপেট কেন ব্যথা হয়, ভারী কেন হয়, তলপেট কেন চুলকায়, পেট কেন শক্ত হয়ে থাকে আরো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এমন সব গর্ভবতী মা ও শিশু বিষয়ক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url