যাকাত কাকে বলে, কাদের উপর ফরজ এবং কত টাকায় যাকাত কত

মসজিদে প্রবেশের ও বাহির হওয়ার দোয়া এবং সুন্নতযাকাত কাকে বলে ও যাকাত কাদের উপর ফরজ সহ যাকাত সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। আপনারা যারা যাকাত সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন তাদেরকে এই পোস্টটি স্বাগতম।
যাকাত কাকে বলে
কারণ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে যাকাত ও যাকাত সম্পর্কিত নানান তথ্য তুলে ধরেছে। তাই যাকাত সম্পর্কিত সকল তথ্যগুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

যাকাত মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। হজের পর যাকাতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক মুসলমানই আছি যারা যাকাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখিনা বা জানিনা যে যাকাত কাদের উপর ফরজ ও কোন কোন জিনিসের উপর যাকাত ফরজ এবং যাকাত কাদেরকে দেওয়া যাবে ও কাদেরকে দেয়া যাবে না। তাই আমরা এই পোস্টে যাকাতের বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছি। তথ্যগুলো জানতে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

যাকাত কাকে বলে

যাকাত একটি আরবি শব্দ। যাকাত দিলে মাল-সামানা পবিত্র হয় এবং বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। ইসলামের শরীয়তে বিধান অনুসারে কোন মুসলমান ব্যক্তি নিছক পরিমাণে সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপরে যাকাত ফরজ হয়। তখন তাকে ২.৫ শতাংশ হারে টাকা বা কাপড় যাকাত হিসেবে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিত করতে হয়। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে মুসলমান ব্যক্তিরদের মন এবং সম্পদ পবিত্র হয়।
নবীগণের মতে নিজের ধন সম্পদ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বের করে বিলীন করাকে ডাকাত বলে।যাকাত দিলে মালামাল পবিত্র হয়।যাকাত দিলে মাল মাল বা জিনিসপত্র কমে না আরো বাড়তে থাকে। এজন্য মুসলমানদের উচিত যাকাত দেওয়া। সম্পদের মালিক হয়েও যাকাত না দিলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায় না। হিসাব পরিমাণ এর সম্পদের মালিক হলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। তাহলে মুশরিক হওয়া যাবে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যাবে।

যাকাত কাদের উপর ফরজ

যাকাত তাদের ওপর ফরজ যাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আছে। যাকাত ইসলাম ধর্মের অন্যতম একটি অংশ। যাদের অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তাদের যাকাত পাওয়া প্রাপ্য অধিকার আছে। এই যাকাত দ্বারা গরিব জনগোষ্ঠীরা নিরাপত্তা পায়। যাদের যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাদেরকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। যাদের ওপর যাকাত ফরজ তা নিচে দেওয়া হলো।

  • ১। যাদের সম্পদের ওপর সমপূর্ণ ভাবে মালিকানার অধিকার আছে।
  • ২। যাদের সম্পদ উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে।
  • ৩। যারা নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্পদের মালিক।
  • ৪। যাদের সম্পদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত যেই সম্পদ থাকে সেই সম্পদ গুলোর উপর যাকাত ফরজ হয়।
  • ৫। ঋণ মুক্ত হওয়ার পর অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে তাহলেই যাকাত ফরজ হবে।
  • ৬। কারো কাছে গচ্ছিত সম্পদের এক বছর হয়ে গেলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হবে।

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

আল্লাহ তার কিছু বান্দাদের সম্পদ দান করেছেন এবং সেই সম্পদের উপর গরিব বের হক ধার্য নির্ধারণ করেছেন। তবে তিনি সব সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ করেননি। আল্লাহ ৪ প্রকার সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ করেছেন।

  • ১। সোনা রুপা মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মালপত্র
  • ২। গৃহপালিত পশু
  • ৩। শস্য ও ফল
  • ৪। খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকিয়ে থাকা সম্পদ
যে মুসলিম ব্যক্তি এই চার প্রকার সম্পদের মধ্যে একটিড় সম্পদের মালিক হবে তাকে সেই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। সোনা ও রুপা মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মালপত্র এবং বছর ধরে মালিকানায় থাকলে যাকাত দিতে হবে। তবে শস্য ও ফল খনিজ মাটির ভিতরে লুকানো সম্পদের মালিক হলে কোন শর্ত নেই। এই সম্পদের মালিক যখন হবে তখন ওই যাকাত দেওয়া যাবে।

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়

সম্পদকে হালাল ও পবিত্র করতে যাকাত দিতে হয়। এছাড়া সম্পদকে বিশুদ্ধ করার উত্তম মাধ্যম হলো যাকাত।কত ভরি সোনা থাকলে যাকাত দিতে হয় তা অবশ্যই জানতে হবে কোন মানুষের কাছে যদি ৭.৫ ভরি সোনা থাকে বা আরো বেশি থাকে তাহলে ওই সোনার যাকাত দিতে হবে। তবে সে সোনা যদি ১ বছর ধরে জমা থাকে তাহলে বর্তমান সোনার দাম অনুযায়ী মোট ৪০ ভাগের এক ভাগ শতকরা ২.৫ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।

১ লাখ টাকায় যাকাত কত

হয়তো অনেকেই জানেন না যে ১ লাখ টাকায় যাকাত কত দিতে হয়। অনেকের অজানা থেকে যায় ১লাখ টাকার যাকাত কত দিতে হবে তাদের জন্য আমাদের এই পোস্টটি। ধ্বনি বান ব্যক্তিরা শরীয়াতের নিয়ম অনুসারে আগে যাকাত দিয়ে থাকতো মোহরের হিসাবে। এখন যেহেতু মোহর নেই তাই স্বর্ণ রুপার হিসাবে যাকাত দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে স্বর্ণ রূপার কি দাম সে অনুসারে এক লাখ টাকায় কত যাকাত হয় সেটা জেনে যাকাত দিতে হবে। ১ লাখ টাকার ওপর ২৫০০ টাকায় যাকাত দিতে হবে।

ব্যাংকের টাকার যাকাত

ইসলামের ভিত্তি যে পাঁচটি বিষয় উপর তারমধ্যে যাকাত হল একটি। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে মুমিন বান্দাদের সাফল্য কায়েম হয়।আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি সাফল্য লাভ করবে, যে ব্যক্তি তার লজ্জা স্থান রক্ষা করে, নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেএবং যাকাত আদায় করে। ইসলামের বর্ণিত আছে যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না তার শাস্তি দুনিয়াতে এবং আখিরাতে নির্ধারণ করা হয়।
সেই জন্যই যাদের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে অবশ্যই উচিত তাদের যথাসময়ে যাকাত আদায় করা। কোন ব্যক্তির যদি ব্যাংকে টাকা থাকে এবং সে যদি ঋণ মুক্ত থাকে আর সেই জমাকৃত টাকায় এক বছর পূর্ণ হয় তাহলে সেই টাকার উপরে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত কাকে দেওয়া যাবে

কাকে যাকাত দেওয়া যাবে তাই ইসলামে স্পষ্ট করে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে তোমরা তাকেই যাকাত দাও যে যাকাতের আসল হকদার অর্থাৎ যে ঋণগ্রস্থ। যে ব্যক্তিকে যাকাত দাও যেন সে ঋণ মুক্ত হতে পারে। তাছাড়া ফকির, মিসকিন, দাস-দাসীদের যাকাত দাও যেন তাদের অভাব কিছুটা হলেও দূর হয়। এছাড়াও বিপদগ্রস্থ মুসাফিরদের ও যাকাত দেওয়া যাবে। যাদের যাকাত দেওয়া যাবে এমন কিছু লোকের নিচে বর্ণনা দেওয়া হলো।

  • ফকিরঃ যার বেঁচে থাকার জন্য খুব অল্প পরিমানে সম্বল আছে যা যথেষ্ট নয় তাকে যাকাত দিতে হবে।
  • মিসকিনঃ এমন অভাবী যার প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা নেই এবং তার ওপর নির্ভর ব্যক্তিদের প্রয়োজন মেটাতে পারে না এমন লোকদের যাকাত দিতে হবে।
  • ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিঃ এমন ব্যক্তি যে ঋণগ্রস্থ সে যাকাত দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।
  • বিপদগ্রস্ত মুসাফিরদের যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে।
  • যাকাতের টাকা দিয়ে কোন দাস-দাসীকে ঋণ মুক্ত করা যেতে পারে।
  • নতুন মুসলমানকে বা মুসলমান হতে চায় তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে তার ঈমানকে মজবুত করা যেতে পারে।
  • সর্বদা আল্লাহর পথে ইসলামের প্রচার কাজে বা প্রতিষ্ঠায় কাজে নিয়োজিত থাকে এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে।
  • যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত থাকে এমন কর্মচারীকে আমিলিন বলে যাকাত দেওয়া যাবে।

যাকাত কাকে দেওয়া যাবে না

আপনাদের সুবিধার্থে আমরা কিছু ক্ষেত্রে তুলে ধরবো। যাদের অথবা যেখানে যাকাত দেওয়া যাবে না। যাতে করে আপনারা সঠিক নিয়ম জানতে পারেন এবং সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে পারেন।

  • ১। যে হিসাব পরিমাণে সম্পদের মালিক।
  • ২। কাফির
  • ৩। হিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নাবালক সন্তান।
  • ৪। বাবা মা নানা-নানী দাদা-দাদী এভাবে যত উপরের স্তরের কাউকে যাকাত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে তাদেরকে সহ উপরের স্তরের কোন ব্যক্তিকেই যাকাত দেওয়া যাবে না।
  • ৫। বনু হাসেমের লোক বা রাসুল (সাঃ) এর পূর্বপুরুষ হাসেমের বংশধর যারা।
  • ৬। স্বামী ও স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবেনা।
  • ৭৷ নিজ মাধ্যমে যারা পৃথিবীতে এসেছে অর্থাৎ মেয়ে বা ছেলে এবং তাদের সন্তানাদিদের যাকাত দেওয়া যাবে না।
  • ৮। মাদ্রাসা মসজিদ হাসপাতাল রাস্তা ফুল বানানোর কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফনের কাজে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না।

সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে

অনেকেই এই প্রশ্ন করেন যে সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে। তাদের প্রশ্ন অনুযায়ী আমরা হে যেভাবে হিসাব করেছি সে অনুযায়ী ৭০ থেকে ৭৩ হাজার টাকা যার আছে তাকেই যাকাত দিতে হবে। তবে এটা নির্ভর করবে, আপনার রুপার মূল্যের ওপর। যদি আপনার রুপার মূল্য একটু বেশি থাকে তাহলে একটু বেশি।

আর যদি ৫৮৫ গ্রাম রুপার মূল্যে সমান অর্থ থাকলে যাকাত দিতে হবে। তা না হলে দিতে হবে না। এখন আপনার সেই মূল্য দেখতে হবে। তবে আমরা হিসাব করেছি আমাদের হিসাব অনুযায়ী সেটা ৭০ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা হবে।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠকগণ আজ আমরা যাকাত সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা এই পোষ্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন এবং আপনাদের ভালো লেগেছে। এমনই সব ইসলামিক তথ্যমূলক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url