ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ - কারণ - বিস্তার ও প্রতিরোধ প্রতিবেদন

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় কত হলে নরমালডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, কারণ, বিস্তার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন ডেঙ্গু রোগ থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনদেরকে রক্ষা করতে হলে। আমরা এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু রোগ কি কারণে হয় এর উৎপত্তি ও বিস্তার কিভাবে এ রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ - কারণ - বিস্তার ও  প্রতিরোধ প্রতিবেদন

এছাড়াও এই রোগ হলে কি করা উচিত, কি করা প্রয়োজন এই সকল বিষয় গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তাই এই সকল বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে যদি ডেঙ্গু ভাইরাসের লক্ষণগুলো আপনি তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেন ও এই ডেঙ্গু রোগের কারণ ও বিস্তার কি কি কারণে হয় এবং ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে কি কি করণীয় তা জানা থাকলে আপনি খুব সহজে এই রোগ হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন।

আমরা এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি বিষয়গুলো জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বর হলো ভাইরাস রোগের মধ্যে একটি যা মশা কামড়ানোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। শুধুমাত্র ক্ষণিকের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রভাব অনেক গভীর হয়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো হলোঃ
  • মাথা ঘোরা
  • ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি
  • বমি বমি ভাব
  • চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি
  • তীব্র মাথার যন্ত্রণা
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • উচ্চজর
  • মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধিতে যন্ত্রণা করা
  • মাথাব্যথা
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া
  • মুখে স্বাদের পরিবর্তন
  • শরীরে শীতলতা অনুভব করা
  • পেশীতে ও গেটেঁ ব্যথা হওয়া
  • চামড়ায় লালচে দাগ
  • হিট স্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া
সংক্রমনের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখা দেয়। সাধারণভাবে এই লক্ষণ গুলো ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে ডেঙ্গু রোগ আক্রান্ত হলে এই রোগের ভয়াবহতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এজন্য প্রথমবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেক সর্তকতা মেনে চলতে বলা হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার

পুরো সতর্কতা মেনে চলেও যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যান তাহলে ভাবছেন কি করবেন? যদি আপনার শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সর্বপ্রথম চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেহেতু ডেঙ্গু একটা ভাইরাসজনিত রোগ এজন্য এর কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। সেজন্য ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং নিচের দেওয়া কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার

  • শরীর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ রেস্টে থাকুন।
  • বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খান।
  • একটা কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে বারবার করে শরীর মুছে নিবেন।
  • জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে পারেন।
যদি আপনার জ্বর কমার পরেও প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবারো শরীর অসুস্থ বোধ করেন তবে নিশ্চয়ই জটিলতার আশঙ্কা আছে। তাই ডেঙ্গু পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা যেতে পারে সেগুলো নিম্নে ব্যাখ্যা করা হল।

  • মধুঃ প্রতিদিন মধু সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ইউনিয়ন সিস্টেম উন্নত করে।
  • নিমের তেলঃ আপনার বাসায় মশার উপদ্রব বেশি হলে মিমের তেল পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন ও ১০ থেকে ১৫ ফোটা নিমের তেল ও পরিমাণমতো নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে শরীরে মাখলে মশার আশেপাশে ঘিসবে না।
  • কালোজিরা তেলঃ কালোজিরা তেল বা গোটা কালোজিরা সব রোগের ওষুধ নামে পরিচিত। তবে তিনটা চামচের বেশি প্রতিদিন খাওয়া ঠিক নয়। যদি আপনি আগে কখনো এই কালোজিরা তেল না খেয়ে থাকেন তাহলে হাফ চামচ করে খেয়ে শরীরে এডজাস্ট করে নিতে পারেন। গর্ভবতী বা যে কোন রোগীকে খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • নারিকেল তেলঃ শুধু নারিকেল তেল শরীরে লাগালে মশা কাছে ঘিসতে চায় না।
  • দেশী মাছঃ শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন মাছ যেমন ছোট মাছ, শিং মাছ, বাইন মাছ, শৈল মাছ, কৈ মাছ, মাগুর মাছ ইত্যাদি দেশি মাছগুলো অনেক ভূমিকা রাখে।
  • ড্রাগন ফলঃ এন্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর ড্রাগন ফল এটির রক্তের সাদা সেল বাড়াতে অনেক সাহায্য করে।
  • লেবুঃ ভিটামিন সি থাকে লেবুর রসে। রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে ভিটামিন সি অনেক গুরুত্ব রাখে। তাছাড়া ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • দুধ কলা ও ডিমঃ প্রতিদিন এই সুষম খাদ্যগুলো গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়। এসব খাদ্যে অনেকের আবার অ্যালার্জি থাকে সে ক্ষেত্রে একটু সাবধানে থাকতে হবে।
  • মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজঃ ব্লাডের প্ল্যাটিলেট তৈরি করতে মিষ্টি কুমড়া অনেক কার্যকর তাছাড়া ভিটামিন এ ভরপুর মিষ্টি কুমড়ায় যা প্ল্যাটিলেট তৈরি করতে অনেক সহায়তা করে। প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার বীদ ফেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  • হলুদের গুঁড়োঃ হলুদের মধ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ লবণ, প্ল্যাটিন ও বিভিন্ন পদার্থ আছে। এজন্য রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে খাবারে দৈনিক হলুদ গুঁড়ো দিতে পারেন ও প্রতিদিন পানি বা দুধের সাথে হলুদের রস বা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। সুস্থ থাকা সম্ভব যদি এই অভ্যাসটা করেন। সাধারণভাবে প্রায়ই অনেক রান্নাতেই এই হলুদ গুঁড়া ব্যবহার করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

সাধারণত শরীরের ডেঙ্গু জ্বর ২ থেকে ৭ দিন অথবা ৩ থেকে ১০ দিন থাকে। স্ত্রী মশা দ্বারা প্রতিটি মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমিত হতে পারে তবে শীতের সময় এই মশার উপদ্রব কম থাকায় এই রোগ কম দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জোয়ার মূলত এডিস মশার কারণে হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তিকে এডিস মশাই কামড়ালে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সে ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এমনভাবে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

সেই সাথে আপনাকে খাবারের দিকেও বিশেষ ভাবে গুরুত্ব ও যত্ন নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে আপনাকে জেনে নিতে হবে যে ডেঙ্গু জ্বরে আপনি কোন খাবারগুলো খাবেন।
  • ডাবের পানিঃ যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে শরীরে তরল জাতীয় পদার্থের অভাব সৃষ্টি হয় ও ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। এজন্য ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণ ডাবের পানি পান করতে হবে। কারণ ডাবের পানিতে আছে ইলেকট্রোলাইটসের এর মতো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
  • ডালিমঃ ভিটামিনে ভরপুর হলো ডালিম সেই সাথে ডালিমে রয়েছে মিনারেল। যদি আপনি প্রতিদিন একটা করে ডালিম খান তাহলে প্ল্যাটিলেট বেড়ে যাবে এবং ক্লান্তিও দূর হবে। এই ফলটি যুগ যুগ আগে থেকেই রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • কমলাঃ ডেঙ্গু জ্বরে খুব ভালো কাজ করে এই কমলার রস কেননা এটাতে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণে এই উপাদানটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পালং শাকঃ ওমেগো-৩ ফ্যাটি এসিড এবং আয়রন পাওয়া যায় পালং শাক থেকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে এই সাতটি অনেক সহায়তা করে। দ্রুত প্ল্যাটিলেট ট বৃদ্ধি করে এই শাকটি গ্রহণ করলে।
  • হলুদঃ হলুদ ডেঙ্গু জ্বরে অনেক কাজে আসতে পারে। হলুদ আপনি রান্নাতেও ব্যবহার করতে পারেন বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে আপনার শরীর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
  • মেথিঃ অতিরিক্ত জ্বর কমাতেও সহজে ঘুমিয়ে যেতে ম্যাজিকের মত কাজ করে মেথি। তবে মেথি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • কিউইফলঃ প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ভিটামিন পাওয়া যায় এই কিউই ফল থেকে। এই ফলটি বেশি খাওয়ার উপকার হলো উচ্চ রক্তচাপ ও ইলেট্রোলাইট স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে। লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বেড়ে যায় এই ফলটি খেলে।
  • ব্রকলিঃ ভিটামিন এর একটা ভালো উৎস হলো ব্রকলি। আরেকদিক রক্তের প্লেটলেট বাড়াতে ব্রকলি অনেক সাহায্য করে। ব্রকলি খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আপনি যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রচুর পরিমাণ ব্রকলি সবজি খাবেন।
  • পেঁপে পাতার জুসঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্লেটলেট পরিমাণ কমে যেতে পারে তাই আপনার অসময়ে অনেক উপকারে আসতে পারে এই পেপে পাতা। কিমোপেইন ও পাপাইন এর মতো এনজাইম সমবৃন্দ এ পেপে পাতা যা আপনার হজম শক্তিকে শক্তিশালী করে তোলে। এবং সেই সাথে প্লেটলেটের পরিমাণও বাড়াতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন অবশ্যই পেপে পাতার স জুস ৩০ এমএল করে খেতে হবে। ঘরে বসেই আপনি এই জুস বানাতে পারেন।
  • নরম খাদ্যঃ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি রুগিকে নরম জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে যেমন সাবু, জাউ ভাত, মারি ভাত, সুপ, নরম কাঁটা ছাড়া মাছ ইত্যাদি এই খাবারগুলো অনেক নরম হয়ে থাকে যার কারণে হজমও খুব সহজে হয়ে যায়।
  • রোগীরা এই সময় অরুতির কারণে খাবার বেশি পরিমাণ খেতে পারেনা তাই রোগীদের জন্য এমন কোন খাবার নির্বাচন করতে হবে যা কম খেলেও সঠিক পরিমাণ ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিছু ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন ফিরনি, পুডিং, মুগ ডালের খিচুড়ি, পায়েস, মিষ্টি দই ইত্যাদি।
  • ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের প্রোটিনের চাহিদা ও অনেক বেড়ে যায় তাই শরীরে প্রোটিনের অভাব দূর করতে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাছ, মুরগি, লাল মাংসতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় আর ডেঙ্গু রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হতে হলে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ

ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার হয়ে থাকে। চার প্রকারের মধ্যেও আপনার যেকোনো একটিতে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। ডেঙ্গু রোগ কিন্তু ছোঁয়াচে রোগ নয়। ডেঙ্গু রোগ স্ত্রী এডিস মশা দ্বারা সংক্রমিত হয়।
ডেঙ্গু রোগের কারণ

যখন কোন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি স্ত্রী এডিস মশা কামড়ায় ডেঙ্গু ভাইরাস তখন ওই মশার শরীরে প্রবেশ করে পুনরায় যখন ওই ডেঙ্গু সংক্রমিত মশাটি রক্ত খাওয়ার জন্য কোন সুস্থ মানুষের শরীরে বসে তখন সুস্থ ব্যক্তিটি ওই মশার দ্বারা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়।
আপনার যদি ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও আপনি যে ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিরকালের জন্য আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে কিন্তু অন্য তিনটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আপনি ভবিষ্যতে আবারো আক্রান্ত হতে পারেন। যদি আপনি ডেঙ্গু জ্বরে একের অধিক বার আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মারাত্মক ডেঙ্গু রোগ হওয়ার চান্স থাকে।

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে

এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে। এডিস মশা দেখতে কালো ও সাদা এটি ছোট আকারের হয় এরা দিনের বেলায় কামড়ায়। এডিস মশা কামড়ানোর সময় ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে ও মানুষের রক্তের প্রবাহের প্রবেশ করে। একজন ব্যক্তির ডেঙ্গু রোগে একবার আক্রান্ত হলে ভাইরাসটির সারা জীবন থাকতে পরে। ডেঙ্গু রোগ কিভাবে বিস্তার ঘটে নিচে তা ছোট আকারে আলোচনা করা হলো।
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে

  • গর্ভবতী মা থেকে সন্তানেরঃ যদি একজন গর্ভবতী মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার গর্ভের বাচ্চার মধ্যেও ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে। তবে খুবই বিরল হয়ে থাকে এই ধরনের সংক্রমণ।
  • এডিস মশায় কামড়ালেঃ একটা ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে যদি একটা এডিস মশা কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু ভাইরাসটি মশার শরীরেও প্রবেশ করে এবং আরেকটা মানুষকে যদি ওই ডেঙ্গু আক্রান্ত মশাটা কামড়ায় তাহলে সেই মানুষটাও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
  • রক্তের মাধ্যমেঃ রক্তের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তবে এইসব ধরনের সংক্রমণ খুবই বিরল।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ

মূলত ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের মূল বিষয়টি হলো সচেতন থাকা এবং বাড়ির আশেপাশের ঝোপ জঙ্গল কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ করতে যে পদক্ষেপ গুলো আমাদের নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো নিচে তুলে ধরা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ

  • রাতে বা দিনে যে কোন সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
  • আপনার বাড়ির চারপাশে কোন গর্ত জায়গায় পানি জমতে দেবেন না কারণ পানি না থাকলে এডিস মশা লার্ভা জন্মাতে পারে না।
  • বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত টায়ার, মাটির পাত্র, টনের কোটা, ফুলের টপ, বালতি, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের পাত্র, প্লাস্টিকের ড্রাম, ব্যাটারি সেল, মটকা, কনটেইনার ইত্যাদিতে পানি জমে থেকে সেখানে এডিট মশা ডিম পাড়ে তাই এসব বজ্রগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • বাসার ছাদে পানি জমে থাকার জিনিসগুলো অপসারণ করুন।
  • বাড়ির ময়লা রাখার স্থান বিশেষ করে পরিষ্কার রাখবেন।
  • বাসায় কোন ধরনের স্টোর রুম না রাখা।
  • ফুলের টপ জিনিসপত্র ও বোতলে পানি জমে থাকলে তা পরিষ্কার করা ও প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অতিরিক্ত জিনিস ফেলে দেওয়া।
  • ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলা।
  • সর্বশেষ বলব যে স্বাস্থ্যকর খাবার ও তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে প্রধান করণীয় হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। অন্যান্য মশার তুলনায় ডেঙ্গু মশার স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে বিস্তার করে। বর্ষার সময়ে ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি হওয়ায় বাড়ির চারপাশে কোন জায়গায় যেন জমে না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

এসি ও ফ্রিজে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডাবের খোসা, কৌটা, পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টপ, প্লাস্টিকের বালটিতে পানি জমতে দেবেন না। দিনে বাড়াতে যেকোনো সময়ে ঘুমোলে মশারি ব্যবহার করুন ও অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গু মৌসুমে বাইরে বা বাসাই দীর্ঘ হাত-পা ওয়ালা কাপড় পরিধান করুন। এবং যে ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত তাকে সব সময় মশারের ভেতরে রাখুন। ডেঙ্গুভাইরাসের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়

চারিদিকে সবাই এখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাই এখন আমাদের মশা কামড়ালেই আমরা ভয়ে মনে করি যে ডেঙ্গু মশা আবার কামড়ানো না তো! তবে ডেঙ্গু সম্পর্কে আমরা অনেকে অনেক কিছু জানলেও ডেঙ্গু মশা দেখতে কেমন হয় তা জানে না। অন্যান্য মশার থেকে ডেঙ্গু মশা একটু আলাদা দেখতে হয়ে থাকে। কিভাবে চিনবেন ডেঙ্গু মশা কোনটি? তাহলে চলুন জেনে নিন ডেঙ্গু মশা চেনার উপায় গুলো।
ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়

  • অন্য মশা থেকে একটু ছোট আকৃতির হয় এই ডেঙ্গু মশা ও তাদের পিছে বীনার মতো চিহ্ন থাকে।
  • ডেঙ্গু মশার গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ দেখা যায় যা বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগের মতো।
  • সাধারণত এই ডেঙ্গু মশা সকালেও বিকেলে কামড়ায়।
  • চুলকানি ও ব্যথা থাকে না ডেঙ্গু মশাই কামড়ালে।
  • ডেঙ্গু মশার ৪০০ থেকে ৬০০ ফুট উচ্চতায় ও উরে বেড়াতে পারে।
  • বাড়ির চৌবাচ্চায় ভাঙ্গা কোন পাত্রে, ফেলে দেওয়া টায়ারে ও পরিত্যাক্ত পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে ডেঙ্গু মশা জন্মায় ও বাস করে।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

না ডেঙ্গু জ্বর কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একমাত্র এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ হয়। একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার বিছানায় ঘুমলে অথবা তার ব্যবহৃত কোন কিছু ব্যবহার করলে এই রোগে আক্রান্ত হবার কোন সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

ডেঙ্গু মশার লালার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণত দিনের বেলায় ডেঙ্গু মশা কামড়ায়। ডেঙ্গু সংক্রমিত মশার কামড়ের পর মানুষের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে যে ডেঙ্গু জ্বরটা বেশি আছে নাকি কম। জ্বর বেশি থাকলে চিকিৎসক নিষেধ করে থাকেন গোসল করতে। কিন্তু জ্বরের তাপমাত্রা যদি কম হয় সে ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে গোসল করা যাবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে কিনা সে বিষয়ে নিচে কিছু নির্দেশনা গুলো আলোচনা করা হলো।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুনঃ গোসলের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন ও গোসলের জন্য পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি ব্যবহার করুন এবং একটি জীবাণু নাশক সাবান ব্যবহার করুন।
  • কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুনঃ শরীরে জ্বর থাকলে শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠতে পারে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে। এজন্য গোসলের সময় হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
  • তৎক্ষণাৎ সাহায্যের জন্য কাউকে পাশে রাখুনঃ কোন দুর্ঘটনা হওয়া বা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তৎক্ষণাৎ সাহায্যের জন্য অবশ্যই অন্য কাউকে পাশে রাখুন।
  • ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই উপরের নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করা উচিত তবে ডেঙ্গু জ্বরে যদি আপনার শরীর অত্যাধিক খারাপ হয় তাহলে ডাক্তারের দ্বারস্থ হন।
ডেঙ্গু জ্বরে যদি আপনার শরীর বেশি দুর্বল লাগে আর গোসল করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে নিচে লিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন।

একটা সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে পুরো শরীর পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন বিশেষ করে মুখ হাত এবং পা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ডেঙ্গু জ্বরে আপনি সাবান শ্যাম্পু দুটোই ব্যবহার করতে পারেন। এই সময় শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলের আলোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে যা আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন এই পোষ্টের মাধ্যমে। আমরা এই ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পোস্ট করে থাকে। এমনই সব স্বাস্থ্যসম্মত টিপসের আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url