কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে
৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়াকি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে এই বিষয় নিয়ে যদি আপনি চিন্তিত থাকেন তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়ুন। কেননা এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে গর্ভস্থ মা ও শিশুর ওজন সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু গুলো নিয়ে। এই পোষ্টটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন।
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে |
তাহলে গর্ভস্থ বাচ্চার ওজন বাড়ার উপায়,গর্ভকালীন সময়ে মায়ের ওজন কতটুকু থাকা উচিত ও শিশুর প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত কেমন ওজন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র
ভূমিকা
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের মনে নানান টাইপের চিন্তা মাথায় আসে। এই সময়টাই শরীরের যেহেতু বিভিন্ন পরিবর্তন আসে এবং পরিবর্তন আসে হরমোনেরও এজন্য প্রাইসই নিত্য নতুন নানান সমস্যার আবির্ভাব ঘটে। একটি সমস্যায় সম্মুখীন প্রায় গর্ভবতী মাইয়েরাই হয়ে থাকেন সেটি হলো ওজন বাড়ে না গর্বের শিশুর।
আপনার গর্ভের বাচ্চার ওজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি আপনি দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে আজকের এই নিবন্ধনটি আপনার জন্য কারণ আজকের এই পোস্টে আমরা গর্ভের বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়ের ওজন নিয়ে আলোচনা করেছি।
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের যেহেতু অতিরিক্ত খাবার খেতে হয় সেহেতু যদি শুরু থেকেই একটি চার্ট মায়েরা বানিয়ে নেয় আর তা মেন্টেন করেন। তাহলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। যদি তারপরও কারো প্রয়োজন অনুসারে বাচ্চার ওজন না বাড়ে তাহলে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলো খেলে সেক্ষেত্রে উপকার পেতে পারে এবং পাশাপাশি মেনে তবে ডাক্তারের পরামর্শ।
বাদাম
আমরা জানি বাদামে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকল রয়েছে। তাই বাদাম হল গুরুত্বপূর্ণ খাবার গর্ভবস্থায়। বাদামে রয়েছে আইরন,জিংক,কপার,ফলিক এসিড যা বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করে। তাই চেষ্টা করবেন গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খাবার। সে যে কোনো বাদামী হোক না কেন। আপনি চাইলে বাদামবুড়ো করে খেতে পারেন।
ডিম
গর্ভবস্থায় বাচ্চার ওজন বাড়াতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য হলো ডিম। ডিমে রয়েছে ফলিক এসিড এবং আয়রনের মত পুষ্টিগুণ গুণ। দৈনিক যদি একটি বা দুইটি সিদ্ধ ডিম খান তাহলে বাচ্চার শারীরিক কোন ত্রুটি বা কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ রোধ করতে সাহায্য করবে। এবং বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
দুধ
খাবার তালিকায় সবার শিষ্যে রয়েছে দুধ। আমরা সবাই জানি যে নিয়মিত দুধ পান করলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়িতে সাহায্য করে। দুধে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যালোরি ও প্রোটিন। এটি গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের দরকার হয়। তাই বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি ও হার গঠনের জন্য গর্ভাবস্থার শুরু থেকে দুধ খাওয়া জরুরি।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়াতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আলুতে আছে পটাশিয়াম ,ফাইবার,ভিটামিন সি,বিটা ক্যারেটিন, ভিটামিন বি৬,এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা শিশুর চোখের গঠন,ত্বক ,হাড়ের গঠনে অনেক সাহায্য করে। তাই চেষ্টা করবেন সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে খাওয়ার।
মাংস
মাংস অনেক বেশি প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। প্রোটিনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎস হলো মুরগির মাংস। গর্ব অবস্থায় বাচ্চার ওজন বাড়াতে মুরগির মাংসের কোন বিকল্প নেই। সকল মানুষেরই একটু একটু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তবে মুরগির মাংসের ক্ষেত্রে তা একটু আলাদা। কেননা এটাতে তেমন ক্ষতিকর কলেস্টেটোল নায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
যার ফলে মাংস বেশি ও কোষের বৃদ্ধি ঘটে এবং খুব দ্রুত বাচ্চার ওজন বাড়ায়। এছাড়াও আপনার যদি খাসি বা গরুর গোশতুতে এলার্জি না থাকে তবে আপনি বাচ্চার ওজন বাড়ানোর জন্য খেতে পারেন।
কমলা
গর্ভের বাচ্চার বুদ্ধি ওজন বাড়াতে কমলার রস ব্যাপকভাবে সরাইতে পারে। পারলে আপনার দিনটি শুরু করুন এক গ্লাস কমলার রস দিয়ে। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে ও শরীরে আয়রন পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি এর মাত্রা বাড়বে,এমনকি বাচ্চার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।
নুডুলস
গর্ভাবস্থায় বাহিরের খাবার বা ফুড না খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তারপরও যদি কারো একান্তই নুডুলস খুব খেতে ইচ্ছা করে তাহলে এক সপ্তাহে সে এক থেকে দুই দিন নুডুলস রান্না করে খেতে পারেন। এবং কিছু মাংস সবজি মিক্স করলে পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ দুটোই অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়। যার ফলে গর্ভের বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করে।
দই
নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি দই খেতে পারেন। দই বা দুধের তৈরি নানা রকম খাবার শারীরিক জটিলতা ঠেকাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় বেশি মিষ্টি দই না খেলে অভ্যাস করুন টক দই খাওয়র। এতে আপনার বাচ্চার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ঢেরস
গর্ভাবস্থায় সবুজ শাকসবজি খাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ শাকসবজিতে যে উপকারিতা রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। শাক-সবজি যেমন সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজন। তেমনি গর্ভাবস্থায় যদি কেউ সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করে এতে বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খেতে গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন যেকোনো ধরনের সবজি রাখার চেষ্টা করুন। এর ভিতর আপনি ঢেঁড়সটা বেছে নিতে পারেন।
মটরশুঁটি ও মসুর ডাল
মসুর ডাল এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আইরন যা গর্ভস্থ মহিলার বাচ্চার দ্রুত ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। মসুর ডাল নিয়মিত খেলে পর্যাপ্ত ফাইবার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। আপনি যদি শাকাহারি হন তাহলে মাছ-মাংস এর পরিবর্তে মসুর ডাল বা মটর শুটি খেতে পারেন। আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন এক বাটি ডাল অবশ্যই রাখবেন।
পানি
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিকভাবে একজন গর্ভবতী মা নানা সমস্যায় ভুগেন। এর মধ্যে শরীর যদি ডিহাইডেট হয় তাহলে আরো অবস্থা খারাপের দিকে যাবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে প্রত্যেকদিন ৪ লিটার বা কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা জরুরী। বেশি বেশি পানি সে বনে গর্ভের বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভস্থ শিশুর ওজন জেনে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গর্বের শিশুর ভালো-মন্দ অনেকটাই নির্ভর করে তার ওজনের উপর। তার ওজনই বলে দেয় যে গর্ভস্থ শিশুর কতটা সুস্থ আছে।
নিচে তালিকা করে দেখানো হয়েছে সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভস্থ শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত
সপ্তাহ | ওজন |
---|---|
৮তম | ১ গ্রাম |
৯তম | ২গ্রাম |
১০তম | ৪গ্রাম |
১১তম | ৭গ্রাম |
১২তম | ১৪গ্রাম |
১৩তম | ২৩গ্রাম |
১৪তম | ৪৩গ্রাম |
১৫তম | ৭০গ্রাম |
১৬তম | ১০০গ্রাম |
১৭তম | ১৪০গ্রাম |
১৮তম | ১৯০গ্রাম |
১৯তম | ২৪০গ্রাম |
২০তম | ৩০০গ্রাম |
২১তম | ৩৪০গ্রাম |
২২তম | ৪৩০গ্রাম |
২৩তম | ৫০১গ্রাম |
২৪তম | ৬০০গ্রাম |
২৫তম | ৬৬০গ্রাম |
২৬তম | ৭৬০গ্রাম |
২৭তম | ৮৭৫গ্রাম |
২৮তম | ১০০৫গ্রাম |
২৯তম | ১১৫৩গ্রাম |
৩০তম | ১৩১৯গ্রাম |
৩১তম | ১৫০২গ্রাম |
৩২তম | ১৭০২গ্রাম |
৩৩তম | ১৯১৮গ্রাম |
৩৪তম | ২১৪৫গ্রাম |
৩৫তম | ২৩৮৩গ্রাম |
৩৬তম | ২৬২২গ্রাম |
৩৭তম | ২৮৫৯গ্রাম |
৩৮তম | ৩০৮৩গ্রাম |
৩৯তম | ৩২৮৮গ্রাম |
৪০তম | ৩৪৬২গ্রাম |
৪১তম | ৩৫৯৭গ্রাম |
৪২তম | ৩৬৮৫গ্রাম |
জন্মের সময় বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজি বা তার বেশি হলে সমস্যা নেই। কিন্তু বাচ্চার ওজন যদি ২.৫ কেজির কম হয় তাহলে তাকে কম ওজন বিশিষ্ট বাচ্চা বলে। কম ওজনের বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন চার্ট
গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি। কারণ অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ভালো মন্দের সাথে বাচ্চার ও ভালো মন্দের বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি। গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন বাড়বে এটা স্বাভাবিক বিষয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কতটা ওজন না বাড়লেই নয় আর কতটা বাড়লে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা জানা প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের ১১ থেকে ১৬ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া টা স্বাভাবিক বিষয়।
আরো পড়ুনঃ ৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
তবে সবার ক্ষেত্রে এই ওজন একরকম হয় না। গর্ভাবস্থায় এটি মূলত নির্ভর করে যে কেমন ছিল মায়ের ওজন অন্তঃসত্ব হওয়ার আগে। গর্ভবতী মা ও সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চার জন্য গর্ভস্থ মায়ের সঠিক ওজন বৃদ্ধির প্রয়োজন। মায়ের গর্ভাবস্থার সময় অনুযায়ী ওজন বৃদ্ধির পর্যবেক্ষণ করে পেটের বাচ্চার বিকাশ ও বৃদ্ধির সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া যায়। নিজের কিছু বিষয় মেনে চললে আদর্শ ওজন বৃদ্ধি হবে।
- আঁশ জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণ খান যেমন গম,লালাটা রুটি ইত্যাদি।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
- প্রতিদিন ৪ লিটার অথবা ৫ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- বেশি করে একবারে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারেবারে খাবার গ্রহণ করুন।
- হালকা ব্যায়াম ও নিয়মিত হাটাহাটি করুন।
- তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- পুষ্টিবিদের জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকদের মতামত
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে শিশুর কতটুকু ওজন হওয়া প্রয়োজন এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো সহ গর্ভাবস্থায় মায়ের কতটুকু ওজন থাকার প্রয়োজন। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে,তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। এবং উপরের উল্লেখিত কথার বাইরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url