৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর মাসিক বন্ধ হয়৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া, প্রেগন্যান্সিকালীন সময়ে পেটের ভেতরে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূতি করা তা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। গর্ভের বাচ্চার সুস্থতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় তার নড়াচাড়া,গতিবিধি থেকে।
৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া |
তবে শিশুর নড়াচড়াটা একেকটা শিশুর একেক রকম হয়ে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে তিন মাসের বাচ্চা থেকে ৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পোস্ট সূচীপত্র
ভূমিকা
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আলোচনা করা হয়েছে গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কে এবং কোন মাসে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কেমন হওয়া উচিত ও গর্ভের শিশুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখা কেন জরুরি। আপনিও যদি এই সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
৩ মাসের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া
সেদিনকার অভিজ্ঞতার কোন তুলনাই হয় না,যেদিন প্রথমবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা মা গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া টের পান। গর্ভবতী মা এই খুশিময় মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। একটি গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া কে সুস্থতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন চিকিৎসকেরা। আর শিশুর সারাদিনের নড়াচড়া ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে বলেন মাকে। এবং এর ব্যাঘাত ঘটলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত মায়ের পেটে শিশুর নড়াচড়া ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়। এই অনুভূতিটা কম্পন বা মৃদু ধাক্কার মত হবে। এই ক্ষেত্রে শিশুর নড়াচড়া টা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
সব শিশুর নড়াচড়া ধরন এক নয়। যেমন কোন শিশু খুব কম নড়াচড়া করে আবার কোন শিশু সব সময় নড়তে থাকে। যখন শিশুর ঘুমের সময় হয় তখন কিন্তু তারা গর্ভের মধ্যেই ঘুমাই বা বিশ্রাম নেয়। তবে ৯০ মিনিটের বেশি হওয়ার কথা না। এজন্য শিশু কখন ও কতক্ষণ ঘুমায় এটা মাকে খেয়াল করে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নবজাতকের বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাস হতে তৃতীয় মাস পর্যন্ত গর্ভপাত বা মিশকারেজ এর ঝুঁকি থাকে। এই সময়ে নিজেকে সতর্ক ও যত্নে রাখবেন।
৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
৪ মাসের গর্ভবতী সময়কালীন মায়েরা বাচ্চার নড়াচড়া করার পাশাপাশি লাথি ও অনুভব শুরু করতে পারে। আর যদি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কালীন সময়েও বাচ্চার লাঠির অনুভব না হয় তবে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই,কারণ এই সব খুব শীঘ্রই ঘটবে।
প্রেগনেন্সির প্রথম ৪ মাস অর্থাৎ গর্ভবতী নারীরা বাচ্চার নড়াচড়া ১ থেকে ১৬ তম সপ্তাহের ভিতর অনুভব করতে পারে না। তবে যেসব নারীরা এর আগেও গর্ভধারণ করেছেন এবং সন্তান জন্ম দিয়েছেন সেই সব নারীদের ভেতর কেউ কেউ এই সময়ের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে শুরু করেন।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়ার ওপর নজর রাখা কেন জরুরী?
যদি কোন কারণে গর্ভের বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায় স্বাভাবিকের তুলনায়। এছাড়াও বাচ্চার নড়াচড়া করার ধরণেরও আসতে পারে পরিবর্তন। আর এমনটা হলে গর্ভের বাচ্চার শরীরে দেখা দিতে পারে ইনফেকশন অথবা অন্য যেকোনো সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের এই সময়টাই বাচ্চার নড়াচড়ার গতিবিধির দিকে নজর রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত
বাচ্চার নড়াচড়ার পরিবর্তন যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারা যায় ততই ভালো। এতে গর্ভের বাচ্চা ও গর্ভবতী মাকে দূরত্ব চিকিৎসা দেওয়া যাবে। ফলে গর্ভের বাচ্চার স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মৃত ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।
৪ মাসের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়ার বা গতিবিধিকে প্রভাবিত করার কারণ
চার মাসের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা কে কিছু কারণ প্রভাবিত করতে পারে। গর্ভবতী মায়ের তার বাচ্চার সুস্বাস্থ্যতা নিশ্চিত করতে কিছু বিষয় বোঝার অনেক প্রয়োজন। যেমনঃ
মায়ের কার্যকলাপের স্তরঃ গর্ভের বাচ্চার গতিবিধি প্রভাবিত করতে পারে গর্ভবতী মায়ের কার্যকলাপ ও নড়াচড়া। শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন ব্যায়াম বা হাটা প্রায় গর্ভবতী নারীদের পেটের শিশুকে আরো নড়াচড়া করতে উদ্বৃত্ত করে থাকে।
আবেগি অবস্থাঃ গর্ভবতী মায়ের মানসিক অবস্থা গর্বের শিশুর গতিবিধি প্রভাবিত করতে পারে। উত্তেজনা বা শীথিলতা,মানসিক চাপ সবই শিশুর কার্যকলাপের মাত্রা কে প্রভাবিত করতে পারে।
কার্যকলাপ ও বিশ্রামচক্রঃ বাচ্চাদেরও বিশ্রাম এবং সময়কালের কার্যকলাপ থাকে যেমনটা থাকে প্রাপ্তবয়স্কদের। অন্যদের কাছে শান্ত হওয়া এবং দ্বীনের নির্দিষ্ট সময়ে আরো সক্রিয় হওয়া তাদের পক্ষে স্বাভাবিক।
৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
৬ মাস প্রথমবার হতে পারে যখন গর্ভবতী মা অনুভব করেন যে তার বাচ্চা পেটে লাথি মারছে এবং লাথি সময়ের সাথে বারছে এবং তা গর্ভবতী মা গণনা করতে পারছে। শিশুর মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকাশ করছে এটি একটি ভালো লক্ষণ।
অবশ্যই এই মাসের শেষ পর্যন্ত উচ্চারিত হয় না বাচ্চার নড়াচড়া,প্রথমবার মায়ের জন্য বিশেষ করে কিন্তু কিছু নারী এই সময়ে আগেও কিছু বাচ্ছার নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। প্রতিটি বাচ্চার নড়াচড়ার একটি ভিন্ন ধরণ থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা
যদি গর্ভবতী মা বাচ্চার নড়াচড়ার ধরন পরিবর্তন বা বাচ্চার নড়াচড়া নিয়ে বিরক্ত হন তাহলে উচিত সব সকল ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলা। কিছু সাধারন কারণ যা গর্ভস্থ মায়ের বাচ্চার নড়াচড়া কে প্রভাবিত করতে পারে। যেমনঃ
- শিশুর আকার।
- অ্যালকোহল সেবন করলে।
- অতিরিক্ত ওজন হওয়া বা মোটা হওয়া
- গর্ভবতী মা যদি নির্ধারিত বা অনির্ধারিত কোন ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকে।
- আপনার শিশু চারপাশে থাকা তরল বেশি থাকা।
৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
গর্ভাবস্থায় সাত মাসের শিশু নড়াচড়া খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারবেন গর্ভবতী মায়েরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হঠাৎ প্রতি .১২ ঘণ্টায় একটি সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা দশ থেকে বারো বার নড়াচড়া করে থাকে। মায়ের এসময় শিশুর নড়াচড়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং এক থেকে গুনে রাখতে হবে শিশুর নড়াচড়া।
গর্ভের মধ্যে বাচ্চা হয়তো দুপুরে নড়েছে,রাতে কিছুক্ষণের জন্য নড়াচড়া করেনি, তখনই গর্ভবতী মায়েরা ভয়ে অস্থির হয়ে জান এবং ভাবেন যে পেটের বাচ্চা কেন নড়াচাড়া করছে না। এতে ভয় বা অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। পেটের ভেতর বাচ্চারা জেগে থাকার পাশাপাশি ঘুমিয়েও থাকে। আপনার বাচ্চা যদি ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১০ বার নড়াচড়া করে তাহলে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চাটি সুস্থ আছে।
গর্ভাবস্থায় সাত মাসে গর্ভবতী মায়েদের সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে অঙ্গে প্রত্যঙ্গে প্রচুর পরিমাণ চাপ মূত্রথলির উপরে পড়বে যার কারণে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের হাঁটতে কষ্ট হবে। তার ওজন বৃদ্ধি পাবে ও পেটের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের বিশেষভাবে মুড সুইং হতে পারে। একজন মা হঠাৎ করে কান্না হাসির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। মেজাজের কিছু পরিবর্তন আসতে পারে এই সময়। এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, সাত মাসের পর থেকে এই ঘটনাটি প্রায় কমবেশি সকল গর্ভবতী মায়ের সাথে ঘটে থাকে।
৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
যখন ৮ মাস চলে আসে তখন অনেক ভয় কাজ করে গর্ভবতী মায়েদের। মায়েরা তখন অনেক দুশ্চিন্তা করেন যে তার বাচ্চার সবকিছু ঠিক আছে কিনা বা বাচ্চা সময়মতো ঠিকভাবে হবে কিনা,এইরকম দুশ্চিন্তা তারা এই সময়টাই বেশি করেন।
আট মাসে আপনার শারীরিক দিক থেকে ও অনেক সমস্যা শুরু হতে পারে। আপনি খুব ক্লান্তি অনুভব করবেন। আপনার শরীর অনেক ভারী হয়ে যাবে।
আপনার শরীরের চাপ আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে থাকবে। কারণ তখন তার মাথার অংশটা নিচে নামতে থাকে। তখন বা সেই সময়টাই অনেক বেশি বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা যায়। একটি বাচ্চার ৮ মাসে হাত পায়ের নখ বড় হয় ও মাথার চুলও বাড়ে।
আরো পড়ুনঃ গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা
২৯ থেকে ৩২ সপ্তাহ কে ৮ মাস বোঝায়। এই সময় বাচ্চার ওজন প্রায় ১২০০ থেকে হাজার ১৮০০ গ্রাম হয়ে থাকে। মাথার চুল ভালোভাবে গজিয়ে যায়। তখন হার তেমন একটা শক্ত না হলেও আট মাসে ধীরে ধীরে হাড় শক্ত হয়ে যায়।
৯ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
নয় মাসের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার প্রায় সব কিছুই সম্পূর্ণ হয়ে যায়, অন্তঃসত্ত্ব অবস্থায় গর্ভকাল বাড়ার পাশাপাশি বাচ্চার নাড়াচাড়া ও বাড়তে থাকে। শিশুর নাড়াচাড়া গর্ভের ৩২ তম সপ্তাহের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। গর্ভবতী গর্ভের শিশুর প্রসবের আগ পর্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থান থেকে থাকে।
একটি সুস্থ শিশুর জন্য নয় মাসে প্রতি দুই ঘণ্টায় প্রায় ১০ বার এর মত লাথি মারা উচিত। যতক্ষণ গর্ভবতী মায়ের পেটে শিশু প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর লাথি মারবে ১০-১২ বারের মত ততক্ষণে এটা এটা স্বাভাবিক।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক,আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এবং আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী নারীর গর্ভের সন্তানের নড়াচড়ার সময় সম্পর্কে।এমনই বিভিন্ন ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের সঙ্গে থাকবেন। ধন্যবাদ!
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url