শুকনো কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
ঘন ঘন সর্দি লাগা কিসের লক্ষণ-ঘন ঘন সর্দি লাগার কারণ ও প্রতিকারশুকনো কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় কিংবা শুকনো কাশির জন্য কোন সিরাপ ভালো ও সর্দি-কাশি থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায় এটা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা করছেন। কারণ এই কাশির সমস্যাটি খুবই বিরক্তিকর একটি সমস্যা।
শুকনো কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় |
এই কাশি যেখানে সেখানে যখন তখন হয়ে হয়। যার কারণে লজ্জিত অনুভূতি হয় এবং এটি কষ্টদায়কও বটে। তাই আজকে আলোচনা করব এই সমস্যা টি থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু সহজ উপায়।
পোস্ট সূচিপত্র
ভূমিকা
আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে সর্দি কাশি হয়ে থাকে। আর যদি এই সমস্যাটি তাড়াতাড়ি ভালো না হয় তাহলে আমাদের মনে নানা রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাই, কি করে এই সমস্যা থাকে মুক্তি পাবো তা নিয়ে। তাই আজ আলোচনা করব কি ভাবে এই বিরক্তিকর রোগ থাকে মুক্তি পাওয়া যাই। তাহলে চলুন আর কথা না বারিয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
শুকনো কাশি কেন হয়
কাশি তেমন একটা ক্ষতিকারক নয় আমাদের জন্য। কিন্তু যদি এই কাশি ২-৩ সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে সেটি ভাবার বিষয় কারণ কাশি বিভিন্ন সমস্যা জন্য হয়ে থাকে। যেমন সাধারণ হাঁপানি,সাইনাসের প্রবাহ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস জনিত সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতা ইত্যাদি। অনেক সময় ধূমপানের কারণে শুকনো কাশি হয়ে থাকে। আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে অনবরত ধুলা-ময়লা প্রবেশের কারণেও এই সমস্যাটি হতে পারে।
শুকনো কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর বিষয়। ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করেই এই সমস্যাটি সারিয়া তোলা সম্ভব। নিচে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
তুলসী
কাশির জন্য তুলসী অনেক উপকারী একটি জিনিস। তুলসীতে রয়েছে ভিটামিন সি আর জিংক যা ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শুকনো কাশি কমানোর জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আদা
কাশি ভালো করার জন্য আদা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী একটি ওষুধ। আপনার হাতের কাছে থাকা আদা দিয়ে খুব সহজেই আপনার শুকনো কাশি দূর করতে পারবেন। এর জন্য আপনি আদা দিয়ে রং চা খেতে পারেন অথবা ছোট ছোট করে আদা কেটে সামান্য পরিমাণ নুন মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনি কিছুদিন নিয়ম করে খান দেখবেন আপনার এই সমস্যাটি আর থাকবে না।
মধু
শুকনো কাশি দূর করার জন্য মধু অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। মধু শুধু কাশি ভালো করে তাই নয়, এর অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা কাশি কমাতে ও গলায় প্রলেপ দিতে সাহায্য করে। এক চা চামচ মধু পানি দিয়ে তিন থেকে চার বার খেতে পারেন অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
রসুন
খান রসুন কারন রসুন বিভিন্ন গুণের অধিকারী তা আমরা প্রায় সকলেই জানি। অয়ালিসিনা নামক উপাদান রয়েছে রসুনে যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। যদিও এই উপাদানটির জন্যই রসুনে বাজে স্মেল আসে কিন্তু এই উপাদানটি শুকনো কাশি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এলাচ
এলাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জীবাণু দমনে কাজ করে। খুশখুসে কাশি ও গলা ব্যথার মত সমস্যা দূর করে থাকে এই এলাচ,তাই শুকনো কাশি কমাতে খাইতে পারেন এলাচ।
আরো পড়ুনঃ গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা
নুন ও পানি দিয়ে গার্গল
একটি গ্লাসে হালকা গরম পানি নিন আর এক চামচ নুন নিয়ে পানিতে মিশিয়ে গার্গল করুন। এটি আপনার গলার সংক্রমণ সেরে তুলতে ও কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
শুকনো কাশির জন্য কোন সিরাপ ভালো
এডোরিসাল সিরাপঃ ওষুধের কথা আসলেই মাথায় চলে আসে স্কয়ার কোম্পানির কথা,আর এই সিরাপটি স্কয়ার কোম্পানির। সিরাপটি অনেক ভালো মানের এবং এটি অল্প সময়ে মধ্যে কাশি ভালো করে।
অফকফ সিরাপঃ ঠান্ডা জনিত রোগ সর্দি-কাশি ভালো করার জন্য এই সিরাপটির অনেক সুনাম রয়েছে।
তুসকা প্লাস সিরাপঃ এটিও স্কয়ারের সিরাপ। বুকে কফ জমাট বাধা,গলা ব্যথা ও শুকনো কাশি এই সমস্যা গুলোর জন্য এই সিরাপ অনেক ভালো কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ নবজাতকের বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়
টমিফেন সিরাপঃ এই সিরাপটি তাদের জন্য যাদের তীব্রকাশী ও শুষ্ক কাশিতে ভুগছে। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত কারণ এই সিরাপটির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন বমি বমি ভাব করা,অস্থিরতা অনুভূতি,শরীর ঝিমঝিম করে ইত্যাদি।
পিউরিয়ালঃ কাশি ভালো করার সিরাপের মধ্য পিউরিয়াল সিরাপটি অনেক জনপ্রিয়। এই সিরাপটি ছোট থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই সেবন করতে পারে। তবে এই ওষুধটি সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং এই সিরাপটি গর্ভবতী মায়েরা সেবন করতে পারবেনা।
শুকনো কাশি ও গলা ব্যথা
আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে সর্দি কাশি গলা ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। শুকনো কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে এন্টিবায়োটি ও নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন অনেকে। তবে এই ওষুধ খাওয়া ছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায়ে শুকনো কাশি ও গলা ব্যথা ভালো যাই।
হলদি দুধ
হলদে দুধের মধ্যে বিশেষ গুণ রয়েছে যা অনেকেই জানে না,আর হলুদ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গলার ব্যথা কমাতে প্রথমে এক গ্লাস দুধে এক চিমটি পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে নিন। তারপর সেই হলদি দুধটাকে ফুটিয়ে নিন। তারপর গরম গরম খেয়ে ফেলুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই মিশ্রণটি খাবেন দেখবেন গলা ব্যথা কমে গেছে।
আরো পড়ুনঃ শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত
লবণ পানি
কাশি ও গলা ব্যথা সারার জন্য লবণ ও কুসুম গরম পানি খুবই কার্যকরী একটি জিনিস। দিনে দুই থেকে তিন বার লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
গোলমরিচ
গোলমরিতে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। গোলমরিচ কাশি ও ব্যথার জন্য অনেক উপকারী একটি জিনিস। এটি শুধু ব্যথা নাশকের কাজ করে না এর আরো অনেক উপকারী গুণাগুণ রয়েছে। যেমনঃ হরমোনের সমস্যা সাড়িয়ে তুলে,সর্দি কাশি ভালো করে,দাঁতের ব্যথা দূর করে। এগুলো ছাড়াও এটি ক্যান্সারের ওষুধ প্রস্তুতেও ব্যবহৃত হয়।
আপনি যদি কুসুম গরম পানিতে একটু গোল মরিচ মিশিয়ে খান তাহলে শুকনো কাশি,গলা ব্যথার মত সমস্যা গুলো আপনার কাছে ভিড়তে পারবে না।
আদা চা
আদা চায়ে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের গলা ব্যথা দ্রুত সারে তুলতে সাহায্য করে এবং চায়ে রয়েছে আরো কয়েকটি উপকারী উপাদান যা অন্য সমস্যা সমাধান করতেও সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা
রসুন,লেবু,মধু
আরো একটি উপায়ে আপনার হাতের কাছে থাকা জিনিস দিয়ে কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে সামান্য পানি নিয়ে তাতে এক কোয়া রসুন বাটা,একটি লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণটা খেয়ে নিন।
শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্ট
- শুকনো কাশি,শ্বাসকষ্ট হলে এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এই সমস্যাটি ঠান্ডা গরমের কারণেও হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চললে আমরা এই সব সমস্যা থেকে বাঁচতে পারি।
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে মানুষের চাপ ও অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কারণে।
- শ্বাসকষ্ট ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার থেকেও হতে পারে। তাই ঠান্ডা খাবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় না আসা পর্যন্ত সেটি খাবেন না।
- ধূমপান করলে শুকনো কাশি হতে পারে তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার এলার্জি আছে যে সকল খাবারে সেই সব খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।
- শুকনো কাশি হলে হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খান।
লেখক এর মতামত
প্রিয় ভিউয়ার্স, এই আর্টিকেলটি আপনি যদি সম্পূর্ণ করে থাকেন তাহলে মুক্তির ঘরোয়া উপায় গুলো জানতে পেরেছেন। আপনার যদি কাশির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের এই পোষ্টে উপরে উল্লেখিত উপায় গুলো এপ্লাই করে দেখতে পারেন, তারপরে না হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। আশা করি উপরে বলা উপাগুলো মেনে চললেই আপনার কাছে দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ!
ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url