শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত

শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যাশিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত ও শিশুদের বুকে কফ জমলে করণীয় কি তা নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল। আপনার আদরের সোনামণির যদি বুকে কফ বসে যাওয়া জড়িত সমস্যা হয়ে থাকে এবং আপনি যদি বুকে কফ জমার লক্ষণ,করণীয় কি সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি সম্পন্ন পড়ুন।
শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত
শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত
কারণ এই সমস্যাটির বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা দ্বারা আপনি উপকৃত হলেও হতে পারেন।

পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

বুকে কফ জমে থাকার কারণে কাশি হয়। আর এর কারণে শিশু ঘুমোতে পারে না কারণ বুকে কফ জমে থাকার জন্য নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় শিশুর। আর এই সমস্যা দূর করতে বেশিরভাগ অভিভাবক কি বাড়ির পাশে থাকা ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক ও নানা ধরনের ওষুধ নিয়ে এনে বাচ্চাকে খাওয়ায়। এটা মোটেও ঠিক না।
শুরুতে শিশুর এইসব ঠান্ডা জনিত সমস্যা চাইলে ঘরোয়াভাবে সমাধান করা যায়। তাই আজ আলোচনা করব শিশুর বুকে কফ জমে থাকা সমস্যাটি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক আপনার শিশুর বুকে কফ জনিত সমস্যা হলে আপনার করনীয় সম্পর্কে।

শিশুর বুকে কফ জমলে কি করা উচিত

বুকে কফ জমে শিশুর শ্বাসকষ্টের মত সমস্যাও হয়ে থাকে। আর এটা থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে একসময়। তাই বিপদ এড়াতে এবং শিশুর কষ্ট কমাতে জেনে নিন শিশুর বুকে কফ জমলে আপনার কি করা উচিত।
  • এক টেবিল চামচ মৌচা ও ১/২ কোয়া রসুন ভেজে নিন ভালো করে। তারপর ভাজা মৌচা ও রসুনের কোয়া গুলো পরিষ্কার একটা কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে বাচ্চার ঘুমোনোর জায়গায় রেখে দিন। এই মিশ্রণটি গরম হয়ে এটা থেকে যে বাষ্প বের হবে সেটা শিশুর নাকে যাবে যার ফলে বাচ্চার বন্ধনাগ খুলে যাবে। এই কাজটি যদি করেন তাহলে এটা বাচ্চার ঠান্ডা ভালো করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
  • আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন রসুনও টমেটোর সুপ। এটি আপনার শিশুর কফ ভালো করার পাশাপাশি শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ করবে।
  • হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এই মিশ্রণটি খাওয়ালে আপনার শিশুকে অনেকটা আরাম দিবে।
  • যদি আপনার শিশু সর্দি কাশি হয় তবে শিশুকে প্রতিদিন কুসুম গরম পানিতে গোসল করাবেন। এতে করে বাচ্চার বুকে সর্দি বসবে না।
  • শিশু ঠান্ডা জড়িত রোগে আক্রান্ত হয়, নানা রোগ জীবাণুর কারণে। এর ফলে তার শরীর দুর্বল হয়ে যায়। সেজন্য বাচ্চার পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন এই সময়। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরকে শক্তি যোগান দেয়।
  • কিছুক্ষণ গরম পানিতে ভাব দিন শিশুকে। এই কাজটি করলে নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে গরম পানির ভাব।

শিশুদের বুকে কফ জমলে করণীয়

শিশুদের বুকে কফ জমে থাকলে তা ঘরোয়া ভাবেই দূর করা যায়। যেমনঃ

গরম পানিতে ভাব

সর্দি এবং কফ যদি বুকে জমে যায় তাহলে শিশুদের শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। আর যদি পরিবেশ আদ্র হয়ে থাকে তাহলে কফ তাড়াতাড়ি শুকাতে চাই না। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের উচিত শিশুদের নিয়মিত গরম পানিতে ভাপ দেওয়া। তার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে পানি নিতে হবে কিন্তু পানি অবশ্যই ফুটন্ত গরম হতে হবে।
তারপর আপনার শিশুকে পানিতে ঝুকিয়ে গরম পানির বাষ্পকে শ্বাসের সাথে গ্রহণ করাতে হবে। আর এই গরম বাষ্প আপনার শিশুর কফ গলাতে সাহায্য করবে।

গরম পানিতে গোসল

আমরা যখন গরম পানি দিয়ে গোসল করি তখন গরম পানির বাষ্প পুরো বাথরুমে ভরে যায়,এক্ষেত্রে বাথরুমের পরিবেশ আদ্র হয়। তাই শীতে আমাদের গরম পানি দিয়ে গোসল করার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকেরা,এতে শরীর উষ্ণ থাকে বলে মনে করেন তারা। তাই আমাদের উচিত আমাদের শিশুদেরকে এই শীতে সবসময় গরম পানি দিয়ে গোসল করানো।

খাওয়ান মধু

শিশুর বুকে সর্দি বা কফ দূর করতে তুলসী পাতা ও মধুর বিকল্প হয় না। বুকে কফ জমলে মধু তা গলাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই আপনার শিশু যদি কফ বসে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন তিন চার ঘন্টা অন্তর অন্তর এক চামচ করে মধু খাওয়ান। ১ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো যাবে না।

বেশি বেশি পানি খাওয়ান

শরীরে পানির পরিমাণ কমতে থাকে বুকে কফ জমলে। এত মিউকাস গ্রন্থিতেও তরলের পরিমাণ কমা শুরু করে আপনার শিশু শরীরে। চিকিৎসকের মত অনুসারে শিশুর এমন সমস্যা হলে একটু পরপর পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। এতে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে শরীরে।

এসেন্সিয়াল অয়েল এর ভাব

এই তেলের ভাত নিলে শিশুর শ্বাসনালী থেকে কফ বের করে শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। এবং এই তেল শ্বাসনালীর ব্যাকটেরিয়া দমন করতে ও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এইচ এল বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য থেকে তৈরি হয়। যেমনঃ থাইম,চা গাছ,দারুচিনি,বাসিল,পিপারমেন্ট ইত্যাদি। এই তেল নাখের কাছে নিয়ে এর ঘ্রাণ শুনলে বুকের কপ গলাতে ভালো কাজ করে। তবে এটি শিশুদের ক্ষেত্রে এপ্লাই করা যাবে কিনা তা চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ করতে হবে।

শিশুদের বুকে ঘড়ঘড় শব্দ

বাচ্চাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যে সমস্যা গুলো হয় অ্যাজমা তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণত শ্বাসনালী ভাইরাসে আক্রান্তের কারণে শ্বাসনালীতে সংকোচন হয় যার ফলে বাচ্চা শ্বাস নেয়ার সময় শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে ঘরঘর শব্দ করে। আর যদি এই সমস্যাটি সঠিক সময়ে সুচিকিৎসা না হয় তাহলে এই সমস্যাটি বা অ্যাজমার সমস্যাটি সারাজীবন থেকে যাবে।
আর বুকে ঘর ঘর শব্দকে হুইজিং বলা হয়ে থাকে। এই সমস্যা হলেই যে অ্যাজমা হয়েছে তা কিন্তু নয়। ফুসফুসের চেকআপ ও এলার্জি টেস্ট করে যদি তা হয় তাহলে এলার্জির ওষুধ ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। বর্তমানে এলার্জি ও অ্যাজমা সমস্যা দূর করা সম্ভব। কিন্তু যদি অবহেলা করে সমস্যাটি পুষে রাখা হয় তাহলে এই রোগ সারানো অনেক মুশকিল হয়ে পড়বে।

অধ্যাপক ডাঃ এ.কে.এম মোস্তফা হোসেন।
এমবিবিএস,ডিটিসিডি,এমডি(চেস্ট),এফসিপি(ইউএসএ)
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস
হোসাফ টাওয়ার,৬/৯ আউটার সার্কুলার রোড,মালিবাগ,ঢাকা-১২১৭,বাংলাদেশ
কন্টাক্টঃ +৮৮০-২-৮৩৩৩৮১১-৩

শিশুদের গলায় কফ আটকে থাকার কারণ

দীর্ঘদিন ধরে আপনার শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট এর মত সমস্যা হয় এবং শুকনো কাশি হয়ে থাকে সেটা হতে পারে কফ জমার লক্ষণপ। এই সমস্যার কয়েকটি লক্ষণ নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণঃ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এমন একটি সমস্যা বা সংক্রমণ শ্লেষ্মা নিঃসরিত অতিরিক্ত হয়ে যায় এজন্য বুকে কফ জমা হয়।

এলার্জিঃ এলার্জির সমস্যা প্রায় মানুষেরই হয়ে থাকে এলার্জি শ্লেষ্মা অতিরিক্ত কারণে বুকের কফ জমতে পারে।

সিওপিডিঃ ফাইবোসিস সিস্টিক কারনে বুকে কফ জমতে পারে পালমোনারি অবস্টাক্টিভ এর পূর্ণরূপ।

হাঁপানিঃ যদি হাঁপানির মতো সমস্যা হয় তাহলে বুঝবেন বুকে কফ জমেছে,অতিরিক্ত শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা প্রবাহ হলে বুকে কফ জমে থাকে।

লেখকের মতামত

প্রিয় ভিউয়ার্স, বুকে কফ জমে থাকে একটি খুব যন্ত্রণাদায়ক এটি শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি আপনার শিশুকে নিউমোনিয়া হওয়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। তাই শিশুদের বুকে কফ জমলে ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করুন আর তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url