শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা

শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালোশীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা শীতকালের শুরুর দিক থেকে ঘরে ঘরে দেখা দেয়া শুরু হয়। বড়দের থেকে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার জন্য ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা এই শীতকালে অল্পতেই সর্দি কাশির মতো নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা
শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা
তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব শীতে বাচ্চাদের যত্নের বিষয় সম্পর্কে ও শীতে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো। আপনার শিশুকে শীতকালীন রোগসমূহ থেকে দূরে রাখার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের পোস্টটি সম্পন্ন পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

গ্রীষ্মকাল পেরিয়ে যখন শীতকালের আগমন হয় তখন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের অসুখের প্রবণতা বাড়ে। তাই অভিভাবকদের কে শীতকালে শিশুর যত্নের বিষয়ে সচেতন ও আরো বেশি যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন। আপনারা আপনার বাচ্চার ঠিকমতো যত্ন নিচ্ছেন তো শীতকালে? এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে শীতকালে শিশুদের সঠিক পরিচর্যার বিষয়ে।

শীতে শিশুর যত্ন,শীতে শিশুর গোসল,খাবার,ত্বকের যত্ন,সুরক্ষা এগুলো বিষয়ে জানতে এই পোস্টটির শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকুন।

শীতে শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা

শীতে স্বাস্থ্য সমস্যা মধ্যগুলোর ভিতর ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশি,জ্বর প্রথমে চলে আসে। বিশেষ করে শীতের শুরুর দিকের তাপমাত্রা কম থাকে আর এই সমস্যাগুলো এই সময়ে বেশি দেখা দেয়। এই সমস্যা বা রোগ হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশের। মূলত শীতে শিশুরা একটু বেশি এই সব রোগের আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা দেয়,কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে।
তবে চিন্তা না করে এই সময়টাতে আপনার শিশুর বিশেষ যত্ন নিন। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে চেষ্টা করেছি শীতকালীন সমস্যা এরাতে আপনাদের করণীয়।
  • বাচ্চার শরীরকে চেষ্টা করুন উষ্ণ রাখার।
  • এক গ্লাস গরম দুধের সাথে একটু হলুদ মিশিয়ে খাওয়ান। কারণ গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে তা সর্দি-কাশি ও জমা কফ এর মত সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
  • তুলসী পাতা ও আদা মধুর সাথে খাওয়ান।
  • মৌসুমী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
  • শিশুকে চেষ্টা করবেন সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার।
  • কিছু সময় শিশুকে প্রতিদিন চেষ্টা করবেন রোধে রাখার,কারণ এতে শরীরের ভিটামিন ডি ঢুকবে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে।
  • ঠান্ডা জাতীয় সকল খাবার এই সময়টাতে শিশুকে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • বাচ্চার কাশি হলে খাওয়াতে পারেন গরম সুপ। এতে করে কাশি কমে যেতে পারে ও গলা ব্যথা কমবে।
  • বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে। কারণ এটা বুকে জমে থাকা কফ পরিস্কার করে ও শ্বাসতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে থাকে।
  • যদি রসুনের ১/২ কোয়া সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়াতে পারেন আপনার শিশুকে, তাহলে ভালো।
  • কালোজিরা,রসুন ও সরিষার তেল একসঙ্গে গরম করে বাচ্চার বুকে পিঠে মালিশ করুন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

  • যদি বাচ্চার খিচুনি হয়
  • বাচ্চার জ্বরের মাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর বেশি হয়ে গেলে।
  • শিশুর মুকুট নীল বর্ণের হয়ে গেলে।
  • যদি শিশুর দেখা দেয় পানিশূন্যতা।
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে।

শীতে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

শীতকাল আসলেই শিশুদের অভিভাবক চিন্তায় পড়েন এটা ভেবে যে তাদের বাচ্চার জন্য কোন ক্রিম নিবে যেটার ব্যবহারের শিশু ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম রয়েছে,জেনে বুঝে ভাল ক্রিম না নিতে পারলে শিশুদের উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। দোকান থেকে শিশুর ক্রিম বা মশ্চারাইজ কেনার সময় সচেতন থাকতে হবে। এবং কোয়ালিটি,ব্যান্ড, ইফেক্ট মুক্ত ক্রিম বা মশ্চারাইজ নিতে হবে।
নিতে কয়েকটি শিশুর ত্বকের যত্নে জনপ্রিয় মশ্চারাইজার এর কথা উল্লেখ করা হলোঃ
  • কিউট বেবি লোশন
  • জনসন বেবি লোশন
  • সিয়া বাটার বেবি লোশন
  • তিব্বত বেবি লোশন
  • হিমালয় হারবার বেবি লোশন

শীতে বাচ্চাদের গোসল

গরম পানি ব্যবহার

শীতকালে অনেক মা তার শিশুকে নিয়মিত গোসল করার না, এটা মোটেও উচিত না। প্রতিদিন গোসল করান তবে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে। আর নবজাতক শিশুর জন্য গরম পানিতে কাপড় ডুবিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। আপনার শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়াবেন ও ব্যবহার করাবেন। মুখ ধোয়া,পান করা সহ শিশুর নানা কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করান। কারণ এমনটা করলে শীতকালে ঠান্ডা জনিত সমস্যাগুলোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

শীতে শিশুর খাবার

এই সময়ে সব শিশুদের একটি কমন প্রবলেম হলো শিশুদের খাবার চাহিদা কমে যাই শীতের সময়। তার জন্য বাচ্চার কিছুটা হলেও স্বাস্থ্য হানি ঘটে। এজন্য এই সময়কালে বাচ্চাদের দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর কিছু কিছু করে ঘনঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। এই সময়ে আরেকটি বড় সমস্যা দেখা দেয় শিশুদের মধ্য সেটা হলো ত্বকের সমস্যা। এই সমস্যার জন্য আপনি আপনার শিশুর খাবার তালিকায় যুক্ত করতে পারেন ডিমের কুসুম,ফলের রস,সবজি সুপ।

এতে শিশু ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে। শীতকালীন মৌসুমী ফল টমেটো ও গাজর বাচ্চাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়াও শীতের মৌসুমে বিভিন্ন সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন আপনার শিশুকে। এতে করে সে মজা করে খাবে এবং তার সাথে পাবে পুষ্টি। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এই শীতের সময় শিশু যাতে কোন ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খাই।

শীতে শিশুর সুরক্ষা

শীতকালে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে যা যা করণীয় তা নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
  • নিয়মিত শিশুর হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • নিয়মিত শিশুকে গোসল করাতে হবে। তার জন্য হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
  • দরজা জানালা খুলে রাখা। যাতে হাওয়া বাতাস ঢুকতে পারে,এতে করে জীবন মুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে। এটা সূর্যের আলো থাকা পর্যন্ত খোলা রাখলে ভালো হয়।
  • গরম খাবার খাওয়ানো
  • ত্বকের যত্ন নেওয়া
  • কিছু সময়ের জন্য খেলাধুলা করতে দিন। এতে করে শরীরের কোষগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে না।
  • শিশুকে পর্যাপ্ত ঘুম পারান। কারণ ঘুম শরীরের সংক্রমণ সম্ভাবনা কমায়।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করাতে ভুলবেন না।

শীতে শিশুর যত্ন

শীতকালে শিশুদের ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে,এর সাথে সাথে সর্দি-কাশি,গলা ব্যথা,জ্বর, নিউমোনিয়া এ সকল রোগগুলো বেশি দেখা দেয়। এজন্য এই সময়ে শিশুদের যত্নের বিষয়ে একটু বেশি মনোযোগী প্রয়োজন।

প্রথমে সচেতন হয়ে নিন

বাচ্চাকে শীতল বাতাস ধুলাবালির কাছ থেকে দূরে রাখুন। যেহেতু মানুষ শীতকালে এ সকল রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই আপনি আপনার বাচ্চাকে নিয়ে জনসমাগমপন্ন জায়গা এড়িয়ে চলুন। এই রোগটি যেহেতু ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ তাই এই রোগের সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে শিশুকে দূরে রাখা উচিত। এবং শিশুর গামছা,তোয়ালে আলাদা হওয়া উচিত।
আপনার বাচ্চার এই ধরনের সমস্যা হলে তাকে মধু,লেবুচা,গরম পানিতে গড়গড়া,বাসক পাতা ও তুলসী পাতার রস প্রভৃতি খাওয়াতে পারেন। আর যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।

গরম পোশাক পরিধান

এ সময় শিশুদেরকে গরম পোশাক,(উলের পোশাক,নেল,মোটা ফ্লানেল) পড়ানো উচিত। তবে শিশুদের সরাসরি ভুলের পোশাক পরানো উচিত ন চিকিৎসকের মতে। কারণ শিশুর এলার্জি হতে পারে উলের ক্ষুদ্র লোমের কারণে। তলে সুতি কাপড় বা গেঞ্জি কাপড় পরিয়ে তারপর উলের কাপড় পড়ানো উচিত। 
আবার এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে কাপড়টি যেন নরম কাপড়ের হয়। তবে এ কথা মাথায় রাখবেন অনেক বেশি গরম কাপড় পরলে শিশু ঘেমে শরীরে ঘাম বসে ঠান্ডা লেগে যাবে। এবং ইনফেকশন হয়ে ঘামাচির মত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেখক এর মতামত

বারোমাসি শিশুদের পরিচর্যা দরকার,তবে শীতকালে তা একটু বেশি প্রয়োজন। কারণ শীতের সময় শিশুদের নানা রোগে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। শীতে শিশুর যত্নের প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ছোটখাটো সমস্যা হলে ঘরোয়া উপায়ে ভালো করা সম্ভব। যদি সমস্যা বেশি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url