গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাগরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন, তাই অনেকের দিন শুরু হয় গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করে। মধুর উপকারী গুণ রয়েছে অনেক, আর যদি এই মধুকে আরো কিছু উপাদানের মিশে খাওয়া যায় তাহলে মধুর উপকারী গুণকে দ্বিগুণ করে দেয়। যেমন দুধের সাথে মধু খাওয়ার উপকারিতা গুণ রয়েছে অনেক।
গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা
গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা
এমন আরো কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলোর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে মধুর গুণকে একটু বেশি বাড়িয়ে দেয়। আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব কোন কোন খাবারে সাথে মধু পান করলে বেশি উপকার পাবেন। এবং কখন খাবেন,কিভাবে খাবেন,খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করুন।

পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

মধু প্রাকৃতিকভাবেই অনেক গুণসম্পন্ন একটি উপাদান। এই মধু আমাদের শরীরের যে কোন সমস্যাতে কাজে লাগে। আর এই মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য। আর পুষ্টিকরের দিক থেকে মধুর গুরুত্ব রয়েছে সবার শীর্ষে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মধুর ভূমিকা রয়েছে অতুলনীয়। এই মধু নিয়ম করে খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মধুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ। এবং এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যও যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

গরম জলে মধু খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। গরম পানির সাথে মধু খাইলে রক্তের শর্করা ও অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকালাপের উপর কোন খারাপ প্রভাব ছাড়াই সাত দিনে ৯০৭ গ্রাম ক্যালোরে বার্ন করা যায়। ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি মধু আরো ও অনেক কয়টি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অতিরিক্ত ওজন হলে মানুষকে নানা রোগে আক্রান্ত করে এবং এই অতিরিক্ত ওজন নানা ধরনের মরণ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করে থাকে। তাই আপনার ওজন যদি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে! আর আপনি এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান,তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কাপ কুসুম গরম জলের সঙ্গে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খান। এটা আপনার অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করবে।

হাটের স্বাস্থ্যের উন্নতি করেঃ গবেষণায় দেখা গেছে, যদি নিয়মিত গরম জলের সাথে মধু ও দারুচিনি মিশে পান করা হয়। তাহলে একদিকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন কমে,তেমনি আর্টারির ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে আর যে কোন ধরনের হাটের রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে ।

এলার্জির প্রকোপ কমাতেঃ গবেষণায় দেখা গেছে এক কাপ কুসুম গরম জলের সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে খেলে আমাদের আশেপাশে থাকা পলেন বা অ্যালার্জি তৈরিকারী উপাদান গুলো সেই ভাবে আমাদের শরীরের উপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে এলার্জির প্রভাব কমতে থাকে।

শরীর থেকে সব বিষ বের করে দেয়ঃ খাবারের সাথে সাথে আরো বিভিন্নভাবে একাধিক ক্ষতিকর উপাদান মানুষের শরীরে ও রক্তে প্রতিনিয়ত মিশে যাচ্ছে। আর এই সকল টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে যদি বের না করা যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ আছে। আর তাই এক্ষেত্রে মধুও গরম জল আপনাকে দারুনভাবে সাহায্য করবে।

এনার্জি বাড়াতে সহায়কঃ আপনি যদি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে আপনি পান করুন মধু ও গরম জল। কারণ এটি মানুষের দেহের অন্দরে জলের কমতে দূর করে এবং শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করে। তেমনি অন্যদিকে মধু দেহে কার্বোহাইড্রেটের এর যোগান ঠিক রাখে, এবং এনার্জীর ঘাটতি কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।

বদ হজমের সমস্যা দূর হয়ঃ সকালে খালি পেটে কুসুম গরম জলে মধু মিশিয়ে পান করলে স্টমাকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে গ্যাস অম্বলের বা বদহজমের সমস্যা হয় না। সেই সাথে মধুর রয়েছে একাধিক পুষ্টিকর উপাদান, মধু অ্যাসিডিটির মত সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের যত্নে দারুন কার্যকারীঃ মধু হলো একটি প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট। এর অর্থ হল দেহের আদ্রতা বজায় রাখতে মধু খুব কার্যকরী উপাদান। ত্বকের হাইড্রেটেড ও সতেজ রাখতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্দির প্রকোপ কমায়ঃ আপনাদের যদি হঠাৎ হঠাৎ ঠান্ডা লাগে,ও গলা ব্যাথা হয়,এবং সেই সঙ্গে হাঁচি কাশিতে ভুকেন তাহলে চিন্তার কারন নাই, এটার সমাধান খুব সহজ। এক কাপ কুসুম গরম জলে ১/২ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন নিয়মিত। দেখবেন আপনার এই সমস্যাটি কমে গেছে। প্রসঙ্গত, বুকে সর্দি জমাট থাকার মত সমস্যা কমাতেও এই যাদুকরি পানীয় উপাদান ও জলের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আমরা শীতকালে জল স্বাভাবিকভাবেই কম খায়। আর সেই জন্য সবচেয়ে বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যাটি এই সময় দেখা দেয়। শুষ্ক মল ও কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা যদি ঘরোয়া উপায়ে সহজে ভালো করতে চান তাহলে খেতে পারেন কুসুম গরম জল ও মধু। কারণ এই সমস্যার সমাধানে দারুণভাবে কাজ করে থাকে এই মধু ও জল।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে মধু। কারণ এটাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এর বৈশিষ্ট্য।

দুধের সাথে মধু খাওয়ার উপকারিতা

দুধ ও মধু এই দুইটি উপাদান মানব দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। মধু পরিচিত তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালের জন্য। আর দুধের ভালো উৎস হলো প্রোটিন ক্যালসিয়াম ও ইলেকট্রিক এসিডে। দুধ ও মধু এই দুটি উপাদান একটি ক্লাসিক সমন্বয়। এই উপাদান আপনাকে শুধু স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করবে না বরং এগুলোকে ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় এর ঔষধিগুণের কারণে।

  • মধুর সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
  • মধু ও দুধ পান করলে গলা ব্যথা কমতে একটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে
  • দুধ মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য গুলো পেটে নানা সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দমন করতে ভূমিকা রাখে। এবং পেটের যেকোনো রোগ থেকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
  • মধু ও দুধের মিশ্রণটি খেলে আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে তার দূর করে ঘুমের মান উন্নত করবে। এবং ঘুম ভালো আসবে।
  • মধু দুধ মিশ্রণটি পান করলে সেটা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • এই মিশ্রণটি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

মধুতে যেমন নানা উপকারী পুষ্টিগুণ রয়েছে,ঠিক তেমনি কালোজিরাতেও বিভিন্ন উপকারী পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা মানব দেহের জন্য দারুন উপকারী। কালোজিরা খেলে ও আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কালোজিরাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্যারোটিন এবং শক্তিশালী হরমোন,

অম্লরোগের প্রতিশোধক ও পাচক এনজাইম এবং অম্লনাশক উপাদান। এটি খেলে দেহের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বদেশ থাকে। আর তাই মধু ও কালোজিরা এই দুইটি গুণসম্পন্ন উপাদান যদি খাওয়া যায় তাহলে এটি যে কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে শরীরকে প্রস্তুত করে তুলতে সাহায্য করবে এবং সর্বত্র সুস্বাস্থ্যর উন্নতি করতে সাহায্য করবে। মধু ও কালোজিরা খাবার কিছু উপকারের দিক নির্মাণ আলোচনা করা হলো

মধু ও কালোজিরা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। মধু ও কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিসের আক্রান্ত রোগীর রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে আনে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিস কমে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

  • নারী পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মধু ও কালোজিরা দারুন কাজ করে থাকে। নিয়ম করে খাবারের সাথে প্রতিদিন কালোজিরা ও মধু খেলে পুরুষের শুক্রাণুর সংজ্ঞা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • কালোজিরা ও মধু নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে স্বাভাবিকে নিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রেখে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
  • যেকোনো ব্যাথা ভালো করতে অনেক ভালো কাজ করে থাকে এই মধু ও কালোজিরা। শরীরে কোন অংশে ব্যথা থাকলে মধু ও কালোজিরা একত্রে খাইতে পারেন দেখবেন উপকার পেয়েছেন।
  • শিশুর মস্তিষ্ক ও দৈহিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা বেশ উপকারে একটু উপাদান। নিয়মিত শিশুকে মধু ও কালোজিরা খাওয়ালে দ্রুত শিশুর মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধির উন্নতি ঘটে। এবং এটি শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে।
  • দেহের রক্তে সঞ্চালন ঠিকমতো হয় নিয়মিত মধুয়া কালোজিরা খেলে।
  • শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি জনিত সমস্যা সমাধানে  ভূমিকা রাখে মধু ও কালোজিরা।

লেখক এর মতামত

সারা বছর জুড়ে মধুক দেহের জন্য উপকারী। মধুতে কোন কোলেস্টেরন নাই, তাই যে কেউ নির্দ্বিধাই মধু খেতে পারেন। মধু বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেটের আলসার ভালো করে, এলার্জি থেকে মুক্তি দেয়, শরীরে এনার্জি যোগান দেয়, বদহজমের সমস্যা কাটিয়ে দেয়, ত্বক ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে মধুতে।
তাই আপনি নিয়মিত মধু খাওয়ার চেষ্টা করবেন বা আপনার খাবার তালিকায় মধুকে এড করবেন। আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজি মাল্টিপ্লাই এর পোস্টে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url